আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র কথিত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে সাধারণ মানুষকে
ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই চক্রের মূলহোতা
আসমা খাতুন সাথী নামে এক নারী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বাক্ষর জালিয়াতি, ভুয়া কাবিননামা তৈরি,
ভুয়া অডিও রেকর্ড ছড়ানোর ভয় এবং সাজানো মামলার হুমকি দিয়ে সাধারণ ও সহজ-সরল মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চলেছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ
তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কয়েকজন ভিকটিম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন
অভিযুক্ত আসমা খাতুন সাথীর শ্বশুর কামাল হোসেনও, যিনি প্রকাশ্যে চক্রটির কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আসমা খাতুন সাথীর নেতৃত্বে গঠিত হানিট্র্যাপ চক্রটি শুধুমাত্র প্রেমের ফাঁদেই ফাঁসায় না,
বরং পরবর্তীতে ভুয়া বিয়ের কাবিননামা তৈরি করে, পুলিশের সহযোগিতায় মামলা ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে।
চক্রটিতে স্থানীয় কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও আদালতের একাধিক মোহরার জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে এসেছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই চক্রের প্রতারণার কারণে ইতোমধ্যে বহু পরিবার ধ্বংস হয়েছে।
তিনটি সংসার ভেঙে গেছে, অনেক নিরীহ পুরুষ বর্তমানে পলাতক জীবন যাপন করছেন। নারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন,
কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। চক্রটি খুলনা ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন থানায়
এবং আদালতে অন্তত ৮টি সাজানো মামলা দায়ের করেছে, যেগুলোর বেশিরভাগই মিথ্যা ও বানোয়াট।
দুই নারী ভিকটিম গুলশান আরা ও মর্জিনা খাতুন অভিযোগ করেন, আসমা খাতুন সাথী
একাধিকবার নিজের নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় পরিবর্তন করে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন।
প্রতিটি মামলায় ভুয়া কলরেকর্ড, ভুয়া লেনদেনের দলিল এবং জাল কাবিননামা ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে ভয় দেখানো হয়।এরপর সেই ভয়কে
কাজে লাগিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতার নামে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, অনেক সময় মামলা দায়েরের আগেই চক্রটি টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ
করে। আইনজীবী সহকারীদের মাধ্যমে মামলা ও গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়, যার ফলে সহজ-সরল মানুষ নিজের সম্মান রক্ষায় এবং পরিবার রক্ষায় অর্থ দিয়ে নিষ্পত্তির পথ খোঁজেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা এই ভয়াবহ প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের
হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং হানিট্র্যাপ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আসমা খাতুন সাথীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে
তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।এমন অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ প্রশাসনিক অভিযান
পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন ঝিনাইদহের সচেতন নাগরিকরাও।