আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
দেশবরেণ্য কবি, নাট্যকার, গবেষক ও সব্যসাচী সাহিত্যিক মুহম্মদ শফিকে নাট্যসাহিত্যে অনন্য
অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক ২০২৫’ প্রদান করা হচ্ছে।
আগামী ২৯ মে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে নটসম্রাট অমলেন্দু
বিশ্বাসের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পদক তুলে দেওয়া হবে।
মুহম্মদ শফি দীর্ঘদিন ধরে নাট্যচর্চা, নাট্যলেখা ও নাট্যআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর নাটক বিভিন্ন সময় ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে মঞ্চস্থ হয়েছে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক রচনা করেছেন, লিখেছেন শিশুদের জন্য নাটক ও যাত্রাপালা।
আশির দশকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর জীবনকাহিনী অবলম্বনে তাঁর রচিত যাত্রাপালা বিশেষ সাড়া ফেলে।
পথনাটক বা মোবাইল ড্রামার মাধ্যমে তিনি ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনেও রেখেছেন সক্রিয় ভূমিকা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্যালেস্টাইন ইস্যুতে বেতার ও মঞ্চনাটক রচনা করেন।
প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের অংশ হিসেবে মুহম্মদ শফি ১৮৭৬ সালের “অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন” বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হন এবং এ সংক্রান্ত একটি গবেষণামূলক গ্রন্থও প্রকাশ করেন।
তাঁর রচিত নাটকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইতোমধ্যে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আজ পর্যন্ত তাঁরপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮৭টি, যার মধ্যে রয়েছে ২২টি নাটক, ৩৪টি কাব্যগ্রন্থ এবং ৯টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ।
দেশ-বিদেশে মুহম্মদ শফি পেয়েছেন নানা সম্মাননা ও পুরস্কার। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য এবং ভারত থেকে পাওয়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি দেশেও পেয়েছেন প্রায় ৫০টি
সম্মাননা। তিনি কাব্যসাহিত্যে ‘কাব্যাচার্য’, নাট্যসাহিত্যে ‘বঙ্গশ্রী’, ‘নাট্যভূষণ’ এবং
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার অব মেরিট’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
পেশাগত জীবনে তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা এবং গ্রন্থাগার পরিচালকের
দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার ভবানীপুর নিজ বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন এবং আত্মজীবনী রচনার
কাজে ব্যস্ত। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য এবং ‘বাংলাদেশ সাহিত্য সেবা সংসদ (বাসাসেস)’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
মুহম্মদ শফির এই অর্জনে দেশবাসীর গর্ববোধ করা স্বাভাবিক। তাঁর সাহিত্যিক অবদান অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্য।