আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহে ইসলামি ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সূচনা (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীর
মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সূচনা ঝিনাইদহ শহরের ওয়্যারলেস পাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের মেয়ে এবং কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড
কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।
দীর্ঘ ২৬ দিন ঢাকার ইউরেসিনা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
অপারেশনের পর থেকেই জ্ঞানহীন অবস্থায় সূচনা
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় পেটে ব্যথা অনুভব করলে সূচনাকে ইসলামি
ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে
অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করেন চিকিৎসক মোজাম্মেল হক। অপারেশনের কিছু সময় পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবারও অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।
প্রায় ৫ ঘণ্টা পরেও তার জ্ঞান না ফেরায় সূচনাকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে বেড না পাওয়ায় পরে ইউরেসিনা
হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই টানা ২৬ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।
স্বজনদের অভিযোগ: অতিরিক্ত এনেস্থেশিয়া ও অবহেলা মৃত্যুর পর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, অপারেশনের সময় অতিরিক্ত এনেস্থেশিয়া
প্রয়োগের কারণে সূচনার শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। অপারেশনের পরপরই তার হাত-পা গুটিয়ে আসা, নীলচে বর্ণ ধারণ এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার কথা বললেও সেটি পেতে সময়ক্ষেপণ হয়।তাদের দাবি, চিকিৎসকদের অবহেলা ও অবিজ্ঞতার
ঘাটতির কারণেই সূচনার মৃত্যু হয়েছে। সূচনার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “অপারেশনের আগে মেয়েটা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, ‘মা চিন্তা
কোরো না, আমি ঠিক হয়ে যাবো। আমি তো ডাক্তার হতে চাই।’ আমার মেয়েকে আর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না, তবে যেন অন্য কোনো মায়ের
কোল খালি না হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
চিকিৎসকদের দাবি ও পাল্টা বক্তব্য:-
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে জানান, “রোগীর ব্রেনে অক্সিজেনের
ঘাটতি হয়েছিল, সম্ভবত পূর্ববর্তী হার্ট সমস্যার কারণে এমনটা ঘটে থাকতে পারে।
আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং আমি ২৫ বছরের অভিজ্ঞ চিকিৎসক।”
অন্যদিকে এনেস্থেশিয়া প্রদানকারী চিকিৎসক ডা. রেজা সেকেন্দার বলেন, “রোগীর বয়স ১২ বছরের বেশি হওয়ায় চিকিৎসা প্রোটোকল অনুযায়ী তাকে প্রয়োজন অনুপাতে এনেস্থেশিয়া দেওয়া হয়েছে।”
তবে সচেতন মহলের অনেকেই মনে করছেন, অপারেশনের সময় সঠিক মাত্রায় এনেস্থেশিয়া প্রয়োগ না করা ও তৎক্ষণাত চিকিৎসায় বিলম্বের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চলমান তদন্ত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ:_
সূচনার মৃত্যুর পর ঝিনাইদহ জেলার স্বাস্থ্যখাতে নজরদারি ও জবাবদিহির অভাব নিয়ে প্রশ্ন
উঠেছে। জেলা সিভিল সার্জন জানান,
“বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। একজন চিকিৎসক একাধিক ভিন্ন
ভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি একসাথে দিতে পারেন না—এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, মৃতের পরিবার লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত
করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গত কয়েক মাসে একাধিক
অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সুষ্ঠু নজরদারি ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।