হরিণাকুণ্ডুতে সরকারি জমি দখলে ভূমিদস্যু চক্র: জাল দলিলের মাধ্যমে কলেজ ছাত্রাবাস ও হাসপাতালের সম্পত্তি কব্জার অভিযোগ

আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার টাওয়ার পাড়া এলাকায় প্রায় ৯৬ শতক সরকারি জমি একটি

প্রভাবশালী চক্র জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে জমিটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, হরিণাকুণ্ডু মৌজার ১০৯ ও ৮১ নম্বর খতিয়ানের ৯২২ নম্বর দাগভুক্ত

জমিটি একসময় সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত এখানে সরকারি চিকিৎসক বসে এলাকার জনগণকে চিকিৎসাসেবা দিতেন।

পরে উপজেলা সদরে নতুন হাসপাতাল স্থাপিত হলে পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়

এবং তা জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,

ভবনটি হরিণাকুণ্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কয়েক বছর কলেজ শিক্ষার্থীরা সেখানে হোস্টেল হিসেবে অবস্থানও করেন।

পরবর্তীতে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়লে, স্থানীয় বদর আলী নামে এক ব্যক্তি জমিটির মালিকানা দাবি করে একটি জাল দলিল প্রস্তুত করেন এবং

আদালতে মামলা দায়ের করেন। তার মৃত্যুর পর মামলা চালিয়ে যান তার ছেলে আফজাল হোসেন,

এবং বর্তমানে মামলা পরিচালনা করছেন আফজালের ছেলে শিমুল হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, আদালতের একতরফা রায় দেখিয়ে তারা বর্তমানে জমিটি দখলে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা নিজের চোখে দেখেছি এখানে চিকিৎসক

বসতেন, রোগী দেখা হতো। পরে কলেজ ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।

এখন কেউ হঠাৎ কাগজ দেখিয়ে ব্যক্তিমালিকানা দাবি করছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

শফি উদ্দিন নামে আরেকজন জানান, “ভবনটির দরজায় এখনও ‘কলেজ হোস্টেল’ লেখা আছে।

তাহলে এটি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেল কীভাবে? সরকার পরিবর্তনের সুযোগে তারা ভূয়া দলিল দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে।”

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মেহের আলী বলেন, “পুরনো সিএস রেকর্ডে অমূল্য কুমার জোয়াদার

নামে নাম রয়েছে এবং নতুন আরএস রেকর্ডে জমিটি ‘কলেজ হোস্টেল’ ও ‘ডোবা’ হিসেবে

চিহ্নিত। যাদের নামে কোনো রেকর্ড নেই, তারাই এখন বলছে জমি কিনেছে।

রেকর্ডে নাম না থাকলে মালিকানা দাবি কি করে সম্ভব?”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুল হোসেন বলেন, “আমাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলেই আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।

” তবে তাদের কাছে দলিলের কপি দেখতে চাইলে জানান, মূল দলিল আদালতে জমা রয়েছে এবং ফটোকপিও তাদের কাছে নেই।

এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরিফুজ্জামান বলেন,

“বিষয়টি জানার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে

আপিল করব। বিষয়টি নিয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

জমিটির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়টি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে রয়েছে। এলাকাবাসী

দাবি করছেন, সরকারি সম্পত্তি যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকে, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *