আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি :-
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেলেমাঠ গ্রামে স্টোন ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা থেকে নির্গত
বিষাক্ত গ্যাস, কালো ধোঁয়া ও গরম ছাইয়ে প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ফসল পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ২০০ কৃষক।
শনিবার (৩১ মে) সকালে মাঠে গিয়ে কৃষকেরা দেখতে পান, রাতের আঁধারে নির্গত গ্যাসে পটল,
ড্রাগন, কচু, কলা, পেঁপে, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি ও ফলের গাছ ঝলসে গেছে।
ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম।
ঘটনার পর থেকে জনরোষের ভয়ে ইটভাটার মালিক জলিলপুর গ্রামের মনি সিটিগোল্ট এবং
হুদা শ্রীরামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসানুজ্জামান জানান, “মাঠে গিয়ে দেখি সব শেষ। গাছগুলোর পাতা পুড়ে
গেছে, ফল নেই, সব শুকিয়ে গেছে। জীবনের সব সঞ্চয় এই ফসলে ছিল।”
আরেক কৃষক সন্টু মিয়া বলেন, “মাঠে গিয়ে চোখ মুখ জ্বলতে থাকে।
পরে জানতে পারি, রাতে ইটভাটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়া হয়েছে।”
কৃষক সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে
বছরের পর বছর নিয়ম ভেঙে ফসলি জমির মাঝখানে ইটভাটা চালাচ্ছে মালিকরা।
প্রশাসন থেকেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
কৃষক আব্দুল আলীম বলেন,“ঋণ করে ১০ বিঘা জমিতে কলা, কচু, পেয়ারা ও পেঁপে লাগিয়েছি। এখন সব শেষ। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো জানি না।”
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছি।
ড্রাগন, কচু, মরিচ, কলা, পেপে, পটলসহ সব ফসলের পাতা পুড়ে গেছে।
এটি ফসলের উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, স্টোন ব্রিকস ইটভাটা দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। সেই সঙ্গে ইটভাটা পরিচালনায় সহযোগিতাকারী পরিবেশ
অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করেছেন তারা।
এ ঘটনায় ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের ধারণা, তারা বিক্ষুব্ধ জনতার রোষ এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন।