ঝিনাইদহে আলোচিত ভ্যানচালক রবে হত্যা মামলায় ১৯ বছর পর চারজনের যাবজ্জীবন ১১ জন খালাস, অভিযুক্ত ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যানও

আবু সাইদ শওকত আলী, বিশেষ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহ: জেলার বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম ওরফে রব (৩২) হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৯ বছর পর রায় ঘোষণা করেছে

আদালত। সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) বিকেলে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক উৎপল কুমার ভট্টাচার্য এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া

হয়েছে। পাশাপাশি মামলার এজাহারভুক্ত ১১ জন আসামিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:মাজেদুল ইসলাম ওরফে মাজু, পিতা হাবিবুর রহমানরসুল, পিতা

আশরাফ,আজিজুল হোসেন, পিতা মৃত আফজাল হোসেন,গোলাম রসুল, পিতা মৃত শামসুদ্দিন।

তাদের সকলেই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের বাসিন্দা।

খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন:

সদর উপজেলার ৭নং মহারাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খুরশীদ আলম মিয়া, যিনি

তৎকালীন সময়ে ইউপি সদস্য ছিলেন এবং মামলার অন্যতম প্রভাবশালী আসামি হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

রায়ের সময় সকল আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার পটভূমি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা:
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে রব ছিলেন সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের মৃত ইনছার আলী শেখের ছেলে। তিনি একজন ভ্যানচালক ছিলেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০০৬ সালের

জানুয়ারিতে রবিউলের স্ত্রী আইরিন খাতুনের সঙ্গে আসামি গোলাম রসুলের পরকীয়ার সম্পর্ক

জনসমক্ষে চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গ্রাম্য সালিশ বসে এবং সালিশের রায়ে গোলাম রসুলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ঘটনায় গোলাম রসুল ও মামলার অন্যান্য আসামিরা তৎকালীন ইউপি সদস্য খুরশীদ

আলমের পক্ষের লোক হিসেবে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন।

সালিশের কিছুদিন পর, ২০০৬ সালের ১০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আসামি

আজিজুলসহ কয়েকজন রবিউলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তিনি নিখোঁজ হয়ে পড়েন।

দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর, একই বছরের ৪ এপ্রিল সদর উপজেলার হুমোদার বিলে খালের দক্ষিণ

পাড়ের কচুরিপানার নিচে মাটিচাপা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহটি শনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন।

এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৪ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে সদর থানায় ১৫ জনের নাম

উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে চলতে থাকে। বিভিন্ন কারণে একাধিকবার রায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩

আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হলেও সেদিন রায় ঘোষণা হয়নি। পরে আরও তিনবার দিন ধার্য করেও রায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।

অবশেষে সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) বিকেলে বহু প্রতীক্ষিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

এই রায়কে কেন্দ্র করে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ

করলেও, দীর্ঘ ১৯ বছর পর বিচার পাওয়াকে বিচার ব্যবস্থার ধীরগতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

এদিকে, নিহত রবিউল ইসলামের পরিবার ও এলাকাবাসী এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

রবিউলের মতো একজন সাধারণ ভ্যানচালককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুমের মতো

নৃশংস অপরাধের বিচার করতে দুই দশকের কাছাকাছি সময় লেগে যাওয়াটা দেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতার বাস্তব চিত্র।

এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা যেন ভবিষ্যতে আর কোনো নিরীহ নাগরিক হত্যার শিকার না হন, সেই প্রত্যাশায় গোটা জেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *