ময়মনসিংহ অফিস:
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ঘটনায় শাপলা বেগম (১৪) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী
নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে আরও দুই শিশু শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল
৯টার দিকে গফরগাঁও উপজেলার দত্তেরবাজার খেয়াঘাট এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শাপলা কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া
উপজেলার চরআলগী গ্রামের মাঈনুদ্দীনের মেয়ে এবং বিরই নদীর পাড় দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির
ছাত্রী। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থী একই গ্রামের বাসিন্দা—মমতাজ উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের হোসেন (৭) ও হাবিব মিয়ার ছেলে আরিফ হোসেন (৭)। তারাও একই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিনের মতো আজও ওই শিক্ষার্থীরা চরআলগী এলাকা থেকে একটি ছোট নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল।
নৌকাটি দত্তেরবাজার কুঠুরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ প্রবল স্রোতের কবলে পড়ে উল্টে
যায়। এতে নৌকার মাঝিসহ পাঁচজন যাত্রীর মধ্যে দুজন কোনোরকমে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও তিনজন পানিতে নিখোঁজ হয়।
পরে স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন এবং কিছু সময় পর শাপলা বেগমের মরদেহ উদ্ধার
করেন। বাকিদের সন্ধানে কাজ শুরু করে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল।
ডুবুরি দলের প্রধান আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। স্থানীয়রা
ইতোমধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। আমরা এখনো বাকি দুই শিশুর সন্ধানে উদ্ধার
তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটছে।”
ঘটনার পর স্থানীয়দের মাঝে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ ভিড় করে নদীর পাড়ে। স্থানীয় গ্রাম
পুলিশের সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, নদীর দুই পাড়ে চরআলগী ও বিরই এলাকায় প্রতিদিন বহু
শিক্ষার্থী এভাবে যাতায়াত করে। নদীতে নৌকা চলাচলের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই আমরা
ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এবং নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এলাকার ছোট ছোট নৌকাগুলোতে কোনো জীবনরক্ষাকারী
সরঞ্জাম নেই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নৌপথে যাতায়াত করে।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ঘটনার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিনিয়ত নৌযান চলাচল হলেও দুর্ঘটনা এড়াতে নেই কোনো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা
ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এমন দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।