আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে বিষধর সাপের ছোবলে প্রাণ হারিয়েছে মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোর।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে সদর উপজেলার মহারাজপুর
ইউনিয়নের বিষয়খালী কেশবপুর গ্রামে। নিহত
মাহাফুজুর ঐ গ্রামের মতিয়ার রহমান মতির
একমাত্র ছেলে এবং স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার (৩০ জুন) বিকালে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
পাশের একটি তালগাছ থেকে মাহাফুজুর একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে বাসায় নিয়ে আসে।
পরদিন মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সে আবারও সাপটি নিয়ে তালগাছ সংলগ্ন স্থানে গিয়ে খেলতে
শুরু করে। খেলার একপর্যায়ে সাপটি তার হাতে ছোবল দেয়।
প্রথমে বিষের গুরুত্ব বুঝতে না পেরে মাহাফুজুর নিজেই গাছের পাতা ঘষে কামড়ের জায়গায়
প্রাথমিক চিকিৎসার চেষ্টা করে। পরে মুখ দিয়েও বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করে, যা তার অবস্থা
আরও জটিল করে তোলে। তার সঙ্গী সোহান
নামের এক বন্ধু বিষয়টি দ্রুত মাহাফুজুরের পরিবারের সদস্যদের জানায়।
বিকেল ৩টার দিকে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের
চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় দ্রুত তাকে ফরিদপুর
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে মাহাফুজুরের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া
নেমে আসে। মা, স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন বলেন,মাহাফুজ ছিল ভদ্র ও প্রাণবন্ত একটি ছেলে। তার এমন অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিঞা বলেন,একটি সামান্য ভুল ও
অজ্ঞতার কারণে একটি সম্ভাবনাময় প্রাণ অকালে নিভে গেল। আমরা প্রত্যেককেই এমন বিপজ্জনক
প্রাণীর প্রতি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের আরও সচেতন করতে হবে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জান্নাত-আরা বলেন,
সাপে কামড়ানোর পর যত দ্রুত হাসপাতালে আনা যায়, রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
কিন্তু মাহাফুজকে অনেক দেরিতে আনা হয়েছিল।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমরা তাকে দ্রুত রেফার্ড করি, তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
বুধবার সকালে কেশবপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মাহাফুজুরের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত
হয়। জানাজায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিঞা,তিন নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার
আতিকুর রহমান আতিক, বিষয়খালী শহীদ মোস্তফা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক শাহ
মোহাম্মদ এনামুল হক ফয়েজি, স্থানীয় ব্যবসায়ী দবির আলীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, শিশু-কিশোরদের বিপজ্জনক প্রাণী ও বস্তু থেকে
দূরে রাখতে হবে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সচেতন করতে হবে।
সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে প্রাণরক্ষার একমাত্র উপায়।