আবু সাইদ শওকত আলী, বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার শালকুপা গ্রামের এক নিরিবিলি পল্লীতে গড়ে উঠেছে একটি
ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাট তৈরির কারখানা। যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে শত শত ক্রিকেট ব্যাট।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ব্যাট সরবরাহ হচ্ছে নিয়মিত, আর সেই ব্যাট হাতে নিয়েই অনেক তরুণ খেলোয়াড় এগিয়ে যাচ্ছেন পেশাদার ক্রিকেটের পথে।
আর এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছেন গ্রামেরই এক পরিশ্রমী কারিগর ও উদ্যোক্তা সুজল কুমার মজুন্দার।
প্রায় ১৮ বছর ধরে ব্যাট তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, গত ৫ বছর ধরে পুরোপুরি একটি পূর্ণাঙ্গ কারখানা
হিসেবে এটি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে কারখানায় কাজ করছেন ৫ জন কর্মচারী, যারা প্রতিদিন গড়ে
১০০ থেকে ১৫০টি ব্যাট তৈরি করছেন। এসব ব্যাট পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে
৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি ব্যাটে গড়ে ৪০-৫০ টাকা লাভ থাকে বলে জানান সুজল।
শালকুপা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুজল কুমারের বাড়ির পাশেই কয়েকটি ঘর নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাট
তৈরির ছোট কারখানা। কোথাও কাঠ কাটা হচ্ছে, কোথাও ব্যাটে কাভার লাগানো হচ্ছে। ছোট ছোট
কাটার মেশিন, কাঠ পরিষ্কারের সরঞ্জাম আর ব্যাট মজুদের দৃশ্য—সব মিলিয়ে জমজমাট একটি কর্মশালা।
কারখানার কর্মচারীরা বলেন, তাঁরা প্রতিদিন ৭৫ টাকা হাজিরায় গড়ে ৫০টি ব্যাট তৈরি করেন। দীর্ঘদিন ধরে
এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ব্যাট তৈরিতে এখন তাঁরা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন।
সুজল জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উপযুক্ত কাঠ সংগ্রহ করে আনা হয়। এরপর তা বাড়িতে এনে
ভালোভাবে শুকানো হয়। তারপর ছোট কাটার মেশিনে কাঠ কেটে ব্যাটের আকার দেওয়া হয়।
পরিশোধনের বিভিন্ন ধাপ শেষে ব্যাটের গায়ে স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়।
এই ব্যাটের ক্রেতা শুধু স্থানীয়রা নন, বরং ঢাকা,
খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরাই এই কারখানা থেকে নিয়মিত ব্যাট সংগ্রহ করেন।
অনেকেই অগ্রিম অর্ডারও দিয়ে রাখেন বলে জানান তিনি।
সুজল কুমার মজুন্দার বলেন, “আমাদের ব্যাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু যন্ত্রপাতি ও আর্থিক
সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছি না। সরকার বা কোনো বেসরকারি
প্রতিষ্ঠান যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এই কারখানাকে বড় পরিসরে রূপ দেওয়া
সম্ভব হবে। তখন আরও বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।”
একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম দিয়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে সাফল্যের মুখোমুখি
করতে পারেন, তারই জীবন্ত উদাহরণ সুজল কুমার মজুন্দার ও তাঁর ব্যাট কারখানা। উদ্যোক্তা হিসেবে
তাঁর এই প্রচেষ্টা অনুপ্রেরণা হতে পারে দেশের অনেক তরুণের জন্য।