চিত্রা নদীর পাড়ে বাঁশের সাঁকো, ছাত্রছাত্রীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অনির্বাণ’

আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার, কামারকুন্ডু ও আন্দোলপোতা এই তিনটি গ্রাম দীর্ঘদিন

ধরে অবহেলিত যোগাযোগ ব্যবস্থার ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পাশেই প্রবাহিত চিত্রা নদী।

নদীর উপর স্থায়ী কোন সেতু না থাকায় স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের তৈরি সাঁকোর ওপর নির্ভর করে আসছেন যাতায়াতের জন্য।

এই অঞ্চলের মানুষজন—বিশেষ করে শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর ও অসুস্থ রোগীরা প্রতিনিয়তই

কোটচাঁদপুর উপজেলা শহর কিংবা জেলা শহর ঝিনাইদহে যাতায়াত করে থাকেন।

জেলা শহর থেকে এসব গ্রাম ২২ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে হলেও কোটচাঁদপুর শহরের দূরত্ব

মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নিত্য প্রয়োজনীয়

কেনাকাটার জন্য মানুষজন নিকটবর্তী এই উপজেলা শহরেই যেতে চান।

কিন্তু চলতি বছরের জুন মাসে অতিবৃষ্টির কারণে চিত্রা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। পানির প্রবল

স্রোতে তছনছ হয়ে যায় বাঁশের সাঁকোটি। ফলে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় হাজারো মানুষের চলাচলের

একমাত্র পথ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্রছাত্রীরা।

শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই চরম দুর্ভোগে পড়ে।

এই সংকটের সময় এগিয়ে আসে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অনির্বাণ’। সংগঠনটি জনগণের দুর্ভোগ

লাঘব ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নিজ উদ্যোগে নতুন করে সাঁকো নির্মাণের কাজ শুরু

করে। সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই সংগঠনটি সংগ্রহ করে প্রায় দেড় হাজারের বেশি বাঁশ, এবং

স্বেচ্ছাশ্রমে দুই শতাধিক শ্রমিকের দিনব্যাপী শ্রমে নির্মিত হয় ১৮০ ফুট দীর্ঘ নতুন বাঁশের সাঁকো

‘অনির্বাণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খোন্দকার ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি মানুষ মানুষের

জন্য। এলাকার মানুষের যে কোনো দুর্যোগে আমরা পাশে থাকতে চাই। এবারও তাই করেছি। মানুষের

যাতায়াত যেন ব্যাহত না হয়, তাই আমরা নিজেরাই এগিয়ে এসেছি।”

সাঁকো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই সাঁকোটি ভেঙে

যায়, এবং প্রতি বছরই এলাকাবাসীকে নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে পুনরায় নির্মাণ করতে হয়।

এই বছর খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় স্থানীয়রা উদ্যোগ নেওয়া থেকে পিছিয়ে যায়।

তখনই অনির্বাণের সদস্যরা হাত বাড়িয়ে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারী আসাদুল, সুরুজ, শাহিন, রবিউল, সবুজ এবং শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ নারীরা বলেন,

“এই বাঁশের সাঁকোটি না থাকলে আমরা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। স্কুল-কলেজে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু

স্থায়ী সেতু থাকলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতো।”

তালসার বাজারঘাট সংলগ্ন চিত্রা নদীর উপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ বহুদিনের দাবি হলেও আজও তা

বাস্তবায়ন হয়নি। একাধিকবার মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কর্তৃপক্ষ নীরব।

এলাকাবাসীর দাবি:-তালসার বাজারঘাটে চিত্রা নদীর ওপর একটি পাকা সেতু। শিক্ষার্থীদের

নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা

সামাজিক সংগঠন অনির্বাণের মতো আরও উদ্যোগ যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তাহলে গ্রামীণ

জনপদের এই অবহেলিত এলাকাগুলো উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি এ

ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *