বিশেষ প্রতিবেদক:-
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে কিছু পরিবার তাদের অসাধারণ অবদানের মাধ্যমে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে
লিখে রেখেছেন। এমনই একটি খ্যাতনামা পরিবার হলো সুচন্দা-ববিতা-চম্পার পরিবার।
এই তিন সহোদরা একাধারে নন্দিত অভিনেত্রী, অন্যদিকে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় রেখেছেন
অনবদ্য অবদান। তাঁদের সম্মিলিত কর্মজীবন দেশের সিনেমা শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়।
🎬 সুচন্দা
পূর্ণ নাম: কোহিনূর আক্তার সুচন্দা জন্মস্থান: যশোর
চলচ্চিত্রে অভিষেক: ১৯৬৫ সালে ‘কাচের দেয়াল’ সিনেমার মাধ্যমে প্রধান পরিচিতি: অভিনেত্রী ও পরিচালক অভিনয় ও পরিচালনায় অবদান:
সুচন্দা ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে রোমান্টিক ও সামাজিক ধাঁচের সিনেমায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
শুধু অভিনয়ে নয়, নির্মাণশিল্পেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ছাপ। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘হাজার বছর ধরে’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পরিচালকসহ ৭টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
পুরস্কার ও সম্মাননা:-জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – সেরা পরিচালক (হাজার বছর ধরে, ২০০৫),আজীবন
সম্মাননা – ২০১৯,বাচসাস পুরস্কার ও অন্যান্য সংগঠনের সম্মাননা
ব্যক্তিগত জীবন:
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ছিলেন সুচন্দার স্বামী। তাঁর প্রেরণাতেই সুচন্দার পরিচালনায় যাত্রা শুরু হয়।
🎬 ববিতা
পূর্ণ নাম: ফরিদা আক্তার ববিতা,জন্ম: ৩০ জুলাই ১৯৫৩, বাগেরহাট,চলচ্চিত্রে অভিষেক: শিশুশিল্পী হিসেবে ‘জ্বলতে সুরুজ’,বিশ্বপরিচিতি: সত্যজিৎ
রায়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অশনি সংকেত’ (১৯৭৩)–এ অভিনয় করে আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেন।
অভিনয়জীবনের বিশেষ দিক:-ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন প্রায় ৩৫০টিরও বেশি সিনেমায়,‘নতুন
সুর’, ‘নয়নমনি’, ‘বসুন্ধরা’, ‘দাহ’, ‘নতুন বউ’, ‘অরুণোদয়’, ‘আমানুষ’—এসব কালজয়ী চলচ্চিত্রে
তার অসাধারণ অভিনয় দর্শক হৃদয়ে গেঁথে আছে,
পুরস্কার ও সম্মাননা:৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা অভিনেত্রী বিভাগে),আজীবন
সম্মাননা – ২০১৬,বহু বাচসাস, মেরিল-প্রথম আলো ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা
ব্যক্তিগত জীবন:ববিতা পুত্র অনিক ইসলাম বর্তমানে কানাডা প্রবাসী।জীবনের একটি দীর্ঘ সময় তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে উৎসর্গ করেছেন।
🎬 চম্পা
পূর্ণ নাম: গুলশান আরা আখতার চম্পা
জন্ম: ৫ জানুয়ারি ১৯৬৫,চলচ্চিত্রে অভিষেক: ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্র দিয়ে, যদিও এর আগে মডেলিং করতেন মাধ্যম: চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক
অভিনয়ে বৈচিত্র্য:
চম্পা একাধারে একজন শক্তিশালী নাট্যশিল্পী এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তাঁর অভিনয়ে আবেগ,
তীব্রতা এবং নারীর আত্মপ্রকাশ বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘গহীনে
শব্দ’, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ প্রভৃতি সিনেমায় চম্পার অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা:-৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা অভিনেত্রী),পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবেও
একাধিকবার জাতীয় স্বীকৃতি,মেরিল-প্রথম আলো, বাচসাসসহ বহু পুরস্কার
🎭 পারিবারিক পটভূমি ও প্রভাব:-
এই তিন বোনের চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ ও সাফল্যের পেছনে ছিল তাঁদের পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও
প্রেরণা। তাঁদের ভাই সোহেল রানা (আসল নাম মাসুদ পারভেজ) নিজেও একজন জনপ্রিয় অভিনেতা,
প্রযোজক ও নির্মাতা। এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে গঠনমূলক ও শিল্পসম্মত
ধারায় এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে।
🔚 উপসংহার
সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা—এই তিন বোন শুধু পর্দায় নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও শিল্পের ইতিহাসেও এক
অনন্য নাম। তাঁদের কর্ম, সংগ্রাম ও অর্জন আমাদের সিনেমা শিল্পের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।