আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই (উপ-পরিদর্শক) মিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে আদালত।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর বহুল আলোচিত এই মামলার রায়ে ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. মাহাবুব আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন:-
আমজাদ হোসেন (নিমতলা, রাজবাড়ী),লিয়াকত হোসেন (নিমতলা,
রাজবাড়ী),আক্কাস আলী (দক্ষিণ দৌলতদিয়া, রাজবাড়ী),আলম শেখ (ভাটি লক্ষীপুর, ফরিদপুর)
যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন:শাহীন (শোভারামপুর,ফরিদপুর),
মো. সাগর (গোয়ালচামট, ফরিদপুর),নুরু খা (টাপাখোলা, ফরিদপুর) এবং মনির হোসেন
(শেখহাটি খাঁ পাড়া, যশোর)।
রায়ের সময় একমাত্র মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে আদালত থেকে
সরাসরি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭ আসামি পলাতক রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন
ঝিনাইদহ কোর্ট ইন্সপেক্টর মোখ্তার হোসেন।
মামলার পটভূমি:
২০১১ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ঝিনাইদহ জেলা শহরের বাস মালিক সমিতির সামনে একটি
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে। পথচারীরা দেখতে পান, চালকরা পুলিশ দেখে পালিয়ে যান।
পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মিরাজুল ইসলামের মোটরসাইকেল।
তৎক্ষণাৎ তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সন্দেহ দানা বাঁধলে
পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। জানা যায়, ওই দিন সন্ধ্যায় এসআই মিরাজুল ইসলাম ইফতার শেষে
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সরকারি অস্ত্র, গুলি, ম্যাগজিন এবং পিস্তলসহ মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।
পরদিন ২৪ আগস্ট সকালে শহরের ভেটেরিনারি কলেজের পূর্ব পাশে একটি ডোবা থেকে হাত-পা বাঁধা
অবস্থায় এসআই মিরাজুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরদেহটি
ছিল, যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি হত্যাকাণ্ড।
এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় পরদিনই অজ্ঞাত
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারি অস্ত্র ও মালামাল
লুটের উদ্দেশ্যেই সন্ত্রাসীরা মিরাজুলকে হত্যা
করেছে। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৮ জানুয়ারি ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ ৮ জনকে দণ্ডিত এবং ৭ জনকে খালাস দেন।
মন্তব্য:আইনজীবীরা বলছেন, এটি একটি নজিরবিহীন রায়, যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর
হামলাকারীদের প্রতি কঠোর বার্তা দেবে। আদালতের এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর বলেন:
“আসামিদের মধ্যে আমজাদ হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তাকে রায়ের পর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাকিরা পলাতক, তাদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
”এই মামলার রায় শুধু নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার নয়, পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য
ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে রইল। সরকারের পক্ষ থেকে এই রায়ের দ্রুত কার্যকর
হওয়া এবং পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।