আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আলোচিত ডাবল মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবলুর
রহমান ওরফে ‘ঘ্যানা’ (৪৫) অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৮টার দিকে কালীগঞ্জ
উপজেলার দুধরাজপুর গ্রামে সেনাবাহিনী, র্যাব ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাকসুদুল আলম। ঘ্যানা কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত মসলেম মোল্লার ছেলে।
গত ১ জুন কালীগঞ্জের তালিয়ান শ্মশানঘাটের পাশে সংঘটিত ডাবল মার্ডার মামলায় ঘ্যানা ২৪ নম্বর
এজাহারভুক্ত আসামি। ওই ঘটনায় বিএনপির দুই নেতা ও সহোদর ভাই আমিনুর রহমান মহব্বত আলী বিশ্বাস ও ইউনুস আলী বিশ্বাস নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে ঘ্যানার নেতৃত্বে সকালে
আমিনুরের ওপর হামলা চালানো হয়। তাকে কুপিয়ে হত্যার পর ছুটে আসা বড় ভাই ইউনুসকেও কুপিয়ে
গুরুতর জখম করা হয়। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর মারা যান।
হামলার পর ঘ্যানা ও তার সহযোগীরা নিহতদের বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুটপাট ও
ভাঙচুর চালায়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং আতঙ্কে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় ঘ্যানা ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম
আনারের ঘনিষ্ঠ ছিল। পরবর্তীতে বিএনপির
অভ্যন্তরীণ বিভাজনের সুযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও ডা. নুরুল ইসলামের অনুসারী হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।
কোলা ও জামাল ইউনিয়নে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম
করে সে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।
এমনকি ডাবল মার্ডার মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে খালি গায়ে নাচানাচি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
গ্রেপ্তারের সময় ঘ্যানার কাছ থেকে একটি বিদেশি ৯ মি.মি. পিস্তল ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের বিষয়টি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়,সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে মো.
বাবলুর রহমান ওরফে ঘ্যানাকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। তিনি হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, “ঘ্যানাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও হত্যা মামলায় রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে।
ঘ্যানার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
দীর্ঘদিন সন্ত্রাসী তৎপরতায় ভীতসন্ত্রস্ত মানুষজন এখন কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় বুকবাঁধছেন।
স্থানীয়রা জানান, এমন অভিযান চলমান থাকলে এলাকায় শান্তি ফিরবে এবং কেউ আর সন্ত্রাসীর ভয়ে পালিয়ে থাকতে হবে না।