মহেশপুরে ভারপ্রাপ্তের কারণে আটকে আছে শূন্যপদে নিয়োগ, দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

রিমন হোসেন, মহেশপুর (ঝিনাইদহ):-

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর এস এম ফার্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং নৈশ

প্রহরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ বহুদিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও বাস্তবে নিয়োগ কার্যক্রম এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান

শিক্ষক আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণকালীন প্রধান

শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানহীন থাকলে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয়। শিক্ষকরা বিভ্রান্ত

হন। আর শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ে।একাধিক শিক্ষক জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজেই প্রধান হওয়ার জন্য আগ্রহী।ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সচল

রাখার বিষয়টিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তিনি। এতে নিয়োগ কার্যক্রমে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, “আমি কোনো ধরনের

অজুহাত দেখাইনি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়ই আমি কাজ করছি। তবে পরিচালনা কমিটির মেয়াদ

শেষ হওয়ায় নতুন নিয়োগ আপাতত বন্ধ রয়েছে। আমি গঠনতন্ত্র পাঠিয়েছি, এখন স্যার বিষয়টি

দেখবেন।এদিকে বিদ্যালয়ের সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদের জন্য

প্রার্থীকে অন্তত ১৫ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী হতে

হবে। আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ সময় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, কার্যত এ বিজ্ঞপ্তির বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমানের বাবা বলেন, আমাদের সন্তানরা কোনো দিক থেকেই সুবিধা পাচ্ছে না।

প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ববোধও কমে যায়।

একজন অভিভাবক বলেন, “এই স্কুল আমাদের এলাকার একমাত্র মানসম্মত স্কুল।

এখানে শিক্ষার মান ধরে রাখতে হলে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা খুব জরুরি।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১’ অনুযায়ী, ৬ মাসের মধ্যে

পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হলে জ্যেষ্ঠ ৩ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে কাউকে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য

ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দীর্ঘ সময় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে

চালানো শিক্ষার স্বার্থে ক্ষতিকর। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানো দরকার।”

বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তার সমাধান জরুরি।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্রুত একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা পরিবেশ আরও নাজুক হয়ে

পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা

কর্মকর্তার দীনেশ চন্দ্র পাল জানান, বিদ্যালয়ে কমিটি না থাকার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্থগিত রয়েছে।

এছাড়াও মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *