আবু সাইদ শওকত আলী, বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) পলাতক ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর ও কথিত
ইসকন সদস্য কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, ধর্মীয়
অনুভূতিতে আঘাত ও রাসুল পাক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে কটুক্তির
অভিযোগ উঠলেও—তিনি এখনো সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হননি।
দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও তার চাকরি বহাল থাকায় বিস্ময় ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ঝিনাইদহ আইএইচটি ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের আন্দোলন এবং জনরোষের মুখে কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস ভারত পালিয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের নামে শহরের ব্যাপারীপাড়ায় অবস্থিত নিজস্ব চেম্বারে ডেকে নিয়ে তিনি যৌন হয়রানিতে লিপ্ত হতেন।
যৌন সম্পর্কে রাজি না হলে ক্লাস পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতেন। এতে হতাশ হয়ে অনেক ছাত্রী মানসিক ভেঙে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কার্ত্তিক গোপালের বিরুদ্ধে মোট অর্ধশতাধিক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
করেছেন। শুধু তাই নয়, ক্লাস চলাকালে তিনি বারবার ধর্মীয় অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং পর্দা করা নিয়ে
কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। এসব অভিযোগ ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ছাত্র নাইমুল হাসান মারুফ
আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ পায়।
ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা মামলাটির নম্বর ঝিসিআর-৮০৯/২৪।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পরবর্তীতে গঠিত তদন্ত কমিটির ৫ পৃষ্ঠার রিপোর্টে
(স্মারক নং ১৯৩৯) কার্ত্তিক গোপালের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আইএইচটি’র সাবেক
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. রেজিনা আহম্মেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে
উল্লেখ করা হয় যে, তিনি যৌন নিপীড়ন ও ধর্মীয় অবমাননায় জড়িত এবং চাকরিতে থাকার যোগ্যতা রাখেন না।
এরপরও ২০২৫ সালের ১৪ মে আদালতের পক্ষ থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন,কার্ত্তিক
গোপালের খোঁজে পুলিশ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ফলে তিনি সহজেই ভারত
পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি একটি পদত্যাগপত্র মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ
করেন, কিন্তু সেটি অফিসিয়ালি গৃহীত হয়নি বলে জানান আইএইচটি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ
টেকনোলজির বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে ঢাকার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে আগেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর অফিসিয়াল রদবদল হওয়ায় হয়তো সেটি পৌঁছায়নি। তবে দ্রুতই নতুন করে চিঠি পাঠানো হবে।”
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (শৃঙ্খলা) ডা. মিছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার দপ্তর এ
বিষয়ে কিছুই জানে না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে নতুন করে প্রতিবেদনসহ প্রমাণাদি পাঠানো হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কার্ত্তিক গোপালের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষুব্ধ আইএইচটি শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী
আশঙ্কা করছেন, যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্র-জনতার বড় ধরনের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
একজন ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, এতো বড় অপরাধের পরও যখন সে চাকরিতে বহাল থাকে, তখন আমাদের আর নিরাপত্তা কোথায়?
বিচার না হলে পুনরায় উত্তাল হতে পারে ঝিনাইদহ আইএইচটি ক্যাম্পাস – এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।