জীবননগর অফিস:
সীমান্ত নিরাপত্তা, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে দেশের অন্যতম ফ্রন্টলাইনের বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ঝিনাইদহের মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ের ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন।
মহেশপুর ব্যাটালিয়ন ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, দামুড়হুদা এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় গত সাড়ে ৬ মাসে ১০৪.৫ কিলোমিটার সীমান্তে প্রহরার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ সময় কালে সীমান্তে মাদকদ্রব্য, স্বর্ণ, অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নানা অপরাধ প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানে ব্যাপক পরিমাণ মালামালও অপরাধী আটক করা হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি ২০২৫ হতে জুলাই পর্যন্ত সময়ে পরিচালিত অভিযানে ৭ হাজার ৯২০ বোতল বিদেশী মদ, ৯ হাজার ৫১৭ বোতল ফেনসিডিল, ৬৮ কেজি ২৬৩ গ্রাম গাঁজা, ৪৫ হাজার ৮০৬ পিস ইয়াবা, ৫কেজি ১১১ গ্রাম
কোকেন,৬ কেজি ৪০৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ হাজার ৫১০ পিস ভায়াগ্রা ও ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ৫০ হাজার ৬৪৫ পিস। এ ছাড়াও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ, কসমেটিকস, পোশাক সামগ্রী, সার, কীটনাশক, ভিওআইপি
যন্ত্রপাতি, আতশবাজি এবং অন্যান্য ভারতীয় মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এসব জব্দকৃত মালামালের বর্তমান বাজার মূল্য ২৪ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা।
বিভিন্ন অভিযানে বিজিবি সদস্যরা সাড়ে ৬ মাসে ৩ কেজি ৬৫৪.১৬ গ্রাম স্বর্ণালংকার ও সোনার বার উদ্ধার করেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ৫০২ টাকা। এসব স্বর্ণ বিভিন্ন সময় মহেশপুর ও জীবননগর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়।
এছাড়াও, অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় এক হাজার ১৩৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতে যাওয়ার সময় এবং ৯৭৯ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কালে আটক করা হয়েছে।
একইসাথে ১৮ জন ভারতীয় নাগরিককে অবৈধ প্রবেশের দায়ে আটক করা হয়েছে। এ সময় ৩৩ জন দালাল ও মানব পাচারকারী ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে ভারতের শংকর অধিকারী (৩৯) নামে একজন মানব পাচারকারীও রয়েছেন।
সীমান্ত এলাকায় অভিযানে দুইটি বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশি ওয়ান শুটারগান এবং ১৪ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করেছেন বিজিবি সদস্যরা।
চলতি বছরের ঈদুল আজহার সময় মহেশপুর ব্যাটালিয়ন দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে সফল হয়েছে। ঈদের পর কোরবানির চামড়া পাচার রোধে বিজিবি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখেন। ফলে এ সময়ে কোন চামড়া পাচারের ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ০৯টি যৌথ টাস্ক ফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে কারেন্ট জাল, ভারতীয় মদ, শাড়ি, থ্রি-পিসসহ ৯০ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ টাকার মালামাল জব্দ করা হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
পাশাপাশি গত ২৫ মে ও ৩০ মে অবৈধ ভাবে ভারতে অবস্থানকারী ৫২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা হয়। পরে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যকার সমন্বয়ের মাধ্যমে ১৮৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে শান্তিপূর্ণ ভাবে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়।
মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) উপ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পরিচালক আবু হানিফ মোঃ সিহানুক জানিয়েছেন, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান ও মানবপাচার প্রতিরোধে বিজিবির তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।