জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় অনুমোদিত সনদ ছাড়াই দাঁতের চিকিৎসা চালাচ্ছেন প্রায় অর্ধডজন ব্যক্তি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্বীকৃতি ছাড়াই নামে রআগে-পরে
ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, ডিডিটি, বিডিএ, ডিটি, এলএমএফ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করে রোগী বাগাতে ব্যস্ত তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে দাঁতের ফিলিং, স্কেলিং, সার্জারি, দাঁত ওঠানো, ক্যাপ ও ফুল সেট দাঁত
বাঁধানোসহ সব ধরনের চিকিৎসা নির্দ্বিধায় করছেন এসব তথাকথিত চিকিৎসকরা। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগ
বা স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি চোখে পড়ছে না।
উপজেলায় মাত্র দুইজন বিডিএস সার্জন রয়েছেন ডা. তৌহিদুজ্জামান (তৌহিদ) ও ডা. জান্নাতুল নাহিদ
(মিতু)। এছাড়া কয়েকজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ডেন্টাল ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে চেম্বার পরিচালনা
করছেন। যা আইনত সীমিত পর্যায়ের চিকিৎসার অনুমতি দিলেও পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল প্র্যাকটিসেরঅনুমোদন দেয় না।
চাঁদের হাসি ডেন্টাল জোনে বিদিশা সুলতানা নিজেকে ডেন্টিস, ডি.ডি.টি পরিচয়ে রোগী দেখছেন।
ঢাকা ডেন্টালে রফিকুল আলম “ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল
টেকনোলজি” ডিগ্রি ব্যবহার করে রোগী দেখাচ্ছেন।
নিরাময় ডেন্টাল হোমে হাবিবুর রহমান“গ্রাম্য ডাক্তার” পরিচয়ে চেম্বার খুলে বসেছেন। নিউ ডেন্টাল হোমে
আব্দুল জব্বার প্রতি বুধবার বিডিএস চিকিৎসক এনে বাকি দিনগুলোতে নিজেই চিকিৎসা দেন।
যিয়াদ ডেন্টালে মো. মোস্তাফিজুর আনোয়ার ওয়ালিদ ডিডিটি (বগুড়া), আরএমপি (ঢাকা) ডিগ্রি ব্যবহার
করছেন। বিল্লাল ডেন্টাল কেয়ারে বিল্লাহ হোসেন নিজেকে বি.ডি.এ (ঢাকা) পরিচয়ে দাঁতের সব
চিকিৎসা দেন। এসব চিকিৎসকেরা তাদের নামের
আগে-পরে ভুয়া ডিগ্রির ব্যবহার করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের অনেকে ৬ মাস থেকে ১ বছরের
স্বল্প মেয়াদি কোর্স করে চেম্বার খুলে রোগী দেখছেন। কোথাও কোথাও এমনকি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানথেকেও ডিগ্রির দাবি করছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
মকবুল হাসান বলেন,“জীবননগরে বিডিএস ছাড়া যারা চিকিৎসা করছেন তারা কোয়াক বা হাতুড়ে।
আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি, প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমীন হোসেন জানান,ডেন্টালের বিষয়টি আমাদের নজরে
এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন,বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার বা
ডেন্টাল সার্জন পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক চেম্বার খুললে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
ডিগ্রিবিহীন এসব ডাক্তারদের দাবি আমরা যতটুকু শিখেছি,তা দিয়েই সমাজের প্রান্তিক ও হতদরিদ্র মানুষকে নামমাত্র ফি
নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সেবা নেয়া সম্ভব হয় না। তাতে সমাজের বিরাট একটি অংশ
চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। আমরা কোন ঝুঁকিপুর্ণ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিই না।
বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া কেউ নামের
আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। আইনের ২৯(১) ধারা অনুসারে, ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার
করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এজন্য সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড
হতে পারে। অপরাধ চলমান থাকলে প্রতিবার অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান
রয়েছে। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টও নির্দেশ দেন, বিএমডিসি অনুমোদিত নয় এমন কোনো
ডিগ্রি, ফেলোশিপ বা ট্রেনিংয়ের নাম প্রেসক্রিপশন, সাইনবোর্ড বা ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করা যাবে না।
জীবননগরের বিভিন্ন চেম্বারে অনুমোদিত ডিগ্রি ছাড়া দাঁতের চিকিৎসা চালাচ্ছেন বহুজন। এতে রোগীরা
যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসার শিকারও হচ্ছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের
কঠোর তদারকি না হলে এসব ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।