জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় আমন ও হাইব্রিড ধান (ধানিগোল্ড) খেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ
বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের সচেতন ও প্রশিক্ষিত করতে মাঠ পর্যায়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর অংশ হিসেবে সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে জীবননগর উপজেলার বাঁকা
গ্রামের মাঠে কৃষকদের নিয়ে আলোক ফাঁদ স্থাপন ও পোকা শনাক্তকরণ বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ পরিচালনা
করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান সরকার।
এই সময় মাঠে উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন,কৃষি সম্প্রসারণ
কর্মকর্তা পাভেল রানা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম ও আমানুর রহমান প্রমুখ।
রাতের অন্ধকারে কৃষক ও কর্মকর্তারা একসঙ্গে মাঠে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে বিভিন্ন প্রজাতির উড়ন্ত
পোকামাকড় পর্যবেক্ষণ করেন। কৃষকদের দেখানো হয় কোনটি ফসলের শত্রু পোকা (যেমন: পাতা
মোড়ানো পোকা, গাছ ফড়িং, গুদা পোকা, ঝড়ো পোকা) এবং কোনটি ফসলের মিত্র পোকা (যেমন:
পরজীবী বোলতা, মাকড়সা ইত্যাদি)। উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান সরকার বলেন,আলোক ফাঁদ
ধানক্ষেতে পোকার উপস্থিতি ও প্রজাতি নির্ধারণের একটি পরিবেশবান্ধব ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
এটি কোনো রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই পোকা
পর্যবেক্ষণ ও দমন কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করে। ফসলের শত্রু ও মিত্র পোকা দু’ধরনেরই তৎপরতা
জানা যায়, যা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে।তিনি আরও বলেন,ধানের জমিতে
হঠাৎ করে কীটনাশক প্রয়োগ না করে আগে আলোক ফাঁদে ধরা পড়া পোকার সংখ্যা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে। এতে কৃষকের খরচ কমে, পরিবেশ রক্ষা হয় এবং উপকারী পোকাও বেঁচে যায়।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জীবননগরের
বিভিন্ন এলাকায় হাইব্রিড ও আমন ধানক্ষেতে লিফ রোলার ও ব্রাউন প্লান্ট হপারসহ (বাদামী গাছ ফড়িং)
কয়েক ধরনের ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দেখা গেছে।
দ্রুত প্রতিরোধে কৃষকদের পাশে থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া স্থানীয় কৃষক আব্দুল গফুর বলেন,আমরা আগে পোকার
আক্রমণ বুঝতাম না। কিন্তু আজ মাঠে আলোক ফাঁদ দেখে বুঝতে পারলাম কোন পোকা ধানের ক্ষতি
করছে, আর কোনটা উপকার করছে। এতে করে অপ্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার কমাতে পারব।
প্রশিক্ষণ শেষে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের মধ্যে আলোক ফাঁদের নির্দেশিকা, পোকার
সনাক্তকরণ চার্ট ও কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা নির্দেশিকা বিতরণ করেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি ধানক্ষেতে আলোক
ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সব ইউনিয়নের কৃষকদের এই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে,যাতে
পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং উৎপাদন খরচও কমে আসে।