গঞ্জেরখবর ডেস্ক;-
ঝিনাইদহ শহর এক সময় দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলযোগাযোগের অংশ ছিল। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এই শহরের বুক চিরেই একসময় গড়েছিল রেল চলাচলের
পথ। প্রায় এক শতাব্দী আগে ঝিনাইদহবাসি প্রত্যক্ষ করেছিল রেলগাড়ির কু-শ্বাস ও সিটি, যা আজ কেবলই স্মৃতির পাতায়।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম রেলপথ চালুর পর, ১৮৮৪ সালে কলকাতা-যশোর-খুলনা রেলপথ চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯১৪ সালে যশোর হতে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ
ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হয়, যা ‘জে.জে. রেললাইন’ নামে পরিচিত ছিল।
এই রেলপথে ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি রেলস্টেশন গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমান কেন্দ্রীয় কবরস্থানের উত্তর পাশে অবস্থিত ছিল। স্টেশন সংলগ্ন এলাকাটি তখন ‘মেথরপট্টি’ নামে পরিচিত ছিল, যেখানে এখন ঝিনাইদহ পৌর মার্কেট গড়ে উঠেছে।
যশোর-ঝিনাইদহ রেলপথে প্রসন্ননগর, কালীগঞ্জ, বারোবাজার ও চুড়ামনকাঠিতে রেলস্টেশন ছিল। রেলপথ সম্প্রসারণ করে কোঁটচাঁদপুর পর্যন্ত ৮ মাইল সংযুক্ত করা হয়, মূলত চিনি শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে।
প্রতিদিন ৪ বার রেল চলাচল করত এ পথে, আর ভাড়া নির্ধারিত ছিল প্রতিমাইল ১ পয়সা। তবে ১৯৩০-এর দশকে সড়ক যোগাযোগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বাস চলাচল শুরু হয়।
১৯৩৫-৩৬ সালের দিকে তুলসীরাম ও কালীগঞ্জের কিছু উদ্যোক্তা কাঁচা রাস্তা দিয়ে যশোর-ঝিনাইদহ বাস লাইন চালু করেন। ধীরে ধীরে বাস চলাচল জনপ্রিয়তা পায়।
বাস মালিকরা রেলের সাথে প্রতিযোগিতায় নামেন—কম ভাড়া, দ্রুত গতির যাত্রা, এবং যাত্রীদের জন্য নাস্তা বা উপহারের ব্যবস্থা করে তারা যাত্রীদের আকৃষ্ট করেন।
রেলগাড়ি তুলনামূলক ধীরগতি ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় যাত্রী হারাতে শুরু করে। ফলত, ১৯৩৬ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক পাকাকরণকালে রেললাইন সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে ফেলা হয়।
আজ, ২০২২ সালের হিসাবে, রেলপথটি প্রতিষ্ঠার ১০৯ বছর পেরিয়ে গেছে। যদিও এখন আর কোনো দৃশ্যমান রেল চিহ্ন অবশিষ্ট নেই, তবুও ইতিহাসের পাতায় এটি আজো জীবন্ত। রেলপথ ছিল ঝিনাইদহবাসির একান্ত স্মৃতি ও গর্বের অংশ।
বর্তমানে, ঝিনাইদহ শহরের ওপর দিয়ে পুনরায় রেললাইন চালুর দাবী জোরালো হয়ে উঠেছে। এ দাবী শুধু আবেগ নয়, এটি একাধারে পরিবহন সুবিধা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
ঝিনাইদহবাসি মনে করে, অতীতে থাকা একটি সরকারি স্থাপনা ও সংযোগ অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
রেলপথ পুনঃস্থাপন শুধু ইতিহাস পুনর্জাগরণ নয়, বরং এটি হতে পারে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত। তাই, ঝিনাইদহ শহরের মধ্য দিয়ে পুনরায় রেললাইন স্থাপনের দাবি আজ সময়েরই দাবি।