জীবননগরে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ বাম্পার ফলনের আশায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগান মালিকেরা

বিশেষ প্রতিবেদক:-

শীতের তীব্রতা কমতে না কমতেই শুরু হয় বসন্তের আগমনী বার্তা। আর বসন্তের বার্তায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় প্রকৃতির নিয়মেই গাছে গাছে আমের মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। ডালে ডালে মুকুল থেকে মধু সংগ্রহে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মৌমাছিদের। তবে মাঝে মধ্যে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আমের মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আমচাষিরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবী আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার কোন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। এখনও সব গাছে গাছে মুকুলে সমারোহ দেখা যাচ্ছে। তবে শীতের তীব্রতা কেটে যাওয়ায় মুকুলের আর কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্র জানায়,উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ৬১২ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। সব চেয়ে বেশী আমের চাষ হয় সীমান্ত ইউনিয়নে। বাণিজ্যিক ভিত্তি আমচাষিদের দাবী ইতিমধ্যেই উপজেলার ৮০-৮৫ ভাগ বাগানে আম বাগানে গাছে গাছে মুকুল শোভা পাচ্ছে। চাষিরা বাগানে আমের ফলন ভাল পাওয়ার আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারছেন।

উপজেলার দৌলৎগঞ্জের আমচাষি মুন্সী আব্দুস সবুর খোকন বলেন,আমাদের ছয় একর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ গাছ মুকুলে ভরে। কয়েক দিনের মধ্যেই গুটি দেখা দেবে। গাছের পরিচর্যায় নানা কীটনাশক ব্যবহার করছেন চাষিরা।

পৌর এলাকার নারায়নপুরের আম ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন বলেন,এবার বছর ৫০ টি বাগান কিনেছি। ইতিমধ্যে ৮০-৭৫ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরোদমে মুকুল থেকে আমের গুটি বের হবে।

উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন এলাকার সদরপাড়া ও নতুনপাড়ার অধিকাংশ জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বাগানে গাছে গাছে মুকুলে ভরে গেছে। বাগান মালিকেরা তাদের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলার রাজনগর গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন,চলতি মওসুমে শীতের আমেজ কাটতে না কাটতেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। অধিকাংশ গাছ মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। এখন শুধু গাছের বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন। ছোট বড় বাগান পরিচর্যায় আমাদের সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। বাগানের আগাছা পরিস্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে বিভিন্ন কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দুর হবে,তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এতে ফলন ভাল পাওয়া যাবে।

জীবননগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন,জীবননগর উপজেলায় ৬১২ হেক্টর জমিতে কয়েক হাজার ছোট বড় আম বাগান রয়েছে। জীবননগর উপজেলায় ফজলি,লখনা,গোপালভোগ,আম্রপালি,আশি^না,হিমসাগর,দুধসর ইত্যাদি জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে। আম্রপালি আমের ফলন বেশী ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলার চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেশী আম্রপালি জাতের আম বাগান গড়ে তুলেছেন। এখনও পর্যন্ত যে সব বাগানে মুকুল পুরোপুরি দেখা যায়নি সে সব বাগানে প্রোটোজিন,নাভা,ফ্লোরা,পিজিআর কীটনাশক ব্যবহার করলে গাছ সতেজ হবে এবং মুকুল বের হতে সহযোগীতা করবে।

উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের আম চাষি সেকেন্দার আলী বলেন,গাছে গাছে মুকুল আসার অনেক আগে থেকে বাগানের যত্ম শুরু করা হয়েছে। এখন ২.৫ ইসি ফিডল্যাম,সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিসাফি ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। এতে গাছে বেশী পরিমানে মুকুল আসার সম্ভবনা থাকে। এবার আবহাওয়া এখনও আমাদের অনুকুলে রয়েছে। তাই আশা করছি ফলনও ভাল পাওয়া যাবে। আর ভাল ফলনের আশায় বাগান পরিচর্যাও করে যাচ্ছি।

জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন,বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে। বাগান মালিকদের আমরা বাগান পরিচর্যা এবং ওষুধ স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। মুকুল পুরোপুরি ফুটলে ও গুটি বাধার পর কীটনাশক ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে গাছে পোকা-মাকড় না থাকলে ও গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলে অহেতুক গাছে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *