চুয়াডাঙ্গায় জমজমাট কোরবানির পশুর হাট: দেশি গরুর চাহিদা তুঙ্গে, দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তাহসানুর রহমান শাহজামাল চুয়াডাঙ্গা:

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগরসহ বিভিন্ন স্থানে বসা হাটগুলোতে প্রচুর গরু-ছাগল উঠেছে।বিক্রেতাদের মতে, ঈদের আগের শেষ হাটগুলোতে বেচাকেনা হবে আরও চাঙা।

বিশেষ করে দামুরহুদার ডুগডুগি, দশ মাইল এবং জীবননগরের ঐতিহ্যবাহী উথলী শিয়ালমারি পশুর হাটে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আগামী বৃহস্পতিবার বসতে যাওয়া এই হাটে ব্যাপারী ও খামারিরা বড় ধরনের বিক্রির আশায় রয়েছেন।

যদিও বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে, তবুও হাট কমিটির কর্মকর্তারা বলছেন, সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

চলতি বছর দেশীয় জাতের ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

খামারিরা বলছেন, গৃহস্থালি পরিবেশে পালা এসব গরু তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর

হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। এসব গরু স্থানীয়ভাবে ‘টাইট গরু’ নামে পরিচিত।

হাটগুলোতে ছোট গরু ৫৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বড় গরু সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ টাকা

দামে বিক্রি হচ্ছে। ৬০ হাজার টাকার মধ্যে দেশি ছোট গরুর বিক্রি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। মাঝারি গরুর দাম ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা এবং বড়

গরু ১ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১৫

হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকায়।

দামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, হতাশ কিছু খামারি
খামারি ও বিক্রেতারা বলছেন, গবাদি পশুর খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় গরুর উৎপাদন খরচ

অনেক বেড়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে গরু বিক্রি করছেন তারা। অন্যদিকে, ক্রেতারা

অভিযোগ করছেন, গত বছরের তুলনায় এবারের দাম অনেক বেশি। আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী আব্দুল করিম জানান, গত বছর যে ষাঁড় এক লাখ ১০

হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তার দাম হাটে বলা হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ছাগলের

ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—যেখানে গত বছর ১৭-১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে মাঝারি ছাগল, এবার সেই ছাগলের দাম ক্রেতারা বলছেন ১৩-১৫ হাজার টাকা।নি রাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবায় জোর

হাটগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

হাটগুলোতে নিয়মিত মাইকিং করে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণে সবাইকে উৎসাহিত করা

হচ্ছে। গদাইপুর পশুর হাটের ইজারাদার জানান, ক্রেতারা যাতে নিরাপদে কেনাকাটা করতে পারেন, সে জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “জেলার প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম মোতায়েন রয়েছে।

গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে, কোনো প্রকার ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। এখানকার গরুগুলোর মান খুব ভালো, কারণ এগুলো স্বাভাবিক খাবারে লালন-পালন করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার কোরবানির পশুর হাটগুলো এখন জমজমাট। ক্রেতা-বিক্রেতারা মুখোমুখি অবস্থানে

থাকলেও শেষ সময়ে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।

দেশি গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ এবং হাট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ পশুর বেচাকেনাকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করে তুলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *