আলমডাঙ্গায় নারীর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

বিশেষ  প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সোলার সেচ পাম্পের পাইপের ভিতর থেকে ডালিমা খাতুন নামে এক মধ্যবয়সী নারীর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার পোলবাগুন্দা গ্রামে গাবতলা মাঠ থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ডালিমা খাতুন (৪৫) একই গ্রামের ফোন্টু মণ্ডলের স্ত্রী। ওই ঘটনায় আটক করা হয়েছে তার স্বামী ফোন্টু মণ্ডলকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নারীদের সাথে অবৈধভাবে মেলামেশা করতেন ফোন্টু মণ্ডল। বিষয়টি জানার পর নিষেধ করেন তার স্ত্রী ডালিমা খাতুন। এনিয়ে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। একই বিষয়ের জের ধরে গত বুধবার রাতে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহটি পোলবাগুন্দা গ্রামে গাবতলা মাঠের মিলন আলীর সোলার সেচ পাম্পের পাইপের ভিতর ফেলে রেখে যান তিনি। বাড়ি না পেয়ে ডালিমা খাতুনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পরিবারের লোকজন। বৃহস্পতিবার সকালে সেচ পাম্পের পাইপের কাছে রক্ত ও মাথার চুল
পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা। পরে ওই সোলার সেচ পাম্পের পাইপের ভিতর মরদেহটি দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় দীর্ঘ সাত-আট ঘন্টা চেষ্টার পর ২০ ফুট পাম্পের পাইপের ভিতর থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার স্বামী ফন্টুকে আদালতে সোপর্দ করলে সে ১৬৪ ধারায় হত্যার কথা স্বীকার করে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ফন্টু আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে বলেছে, সে পরকীয়ার জেরে তার স্ত্রীকে হত্যার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক বুধবার সন্ধ্যা রাতে পেঁয়াজ তোলার কথা বলে তাকে মাঠে নিয়ে যায়। বোরিংয়ের কাছে গিয়ে পেছন দিক থেকে কোপায় তার স্ত্রী ডালিমাকে। ডালিমা মাটিতে পড়ে গেলে আরও কয়েকস্থানে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বোরিংয়ের পাইপের মধ্যে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। পরদিন সে প্রচার করে রাগ করে বাড়ী থেকে চলে গেছে। পরে সরোজগঞ্জে গহনা বিক্রি করতে গিয়ে এক যুবক দেখে ফেললে সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়।
এদিকে মায়ের হত্যার ঘটনায় তার সন্তান পিতাকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, নিহত ডালিমা খাতুনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ওই রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন নারীদের সাথে অবৈধভাবে মেলামেশা করতেন ফোন্টু মণ্ডল। বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে হত্যার পর সেচ পাম্পের পাইপের ভিতর ফেলে দেন তিনি। বিকেলে নিহতের স্বামী ফোন্টু মণ্ডলকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। ওই ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *