রিমন হোসেন,মহেশপুর প্রতিনিধি:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসন।দীর্ঘদিন ধরে
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে এবার দলটির অন্তত ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী একযোগে
মাঠে নামায় দেখা দিয়েছে বিভাজন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে গোছানো ও সুসংগঠিত প্রচারণা চালিয়ে এককভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন,আমিরুজ্জামান খান শিমুল কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-
সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে ও মহেশপুর উপজেলা
বিএনপির সভাপতি ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল,মনির খান কণ্ঠশিল্পী ও সাবেক জাসাস
নেতাইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান
সিদ্দিক – কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রতিটি প্রার্থী নিজ নিজ বলয় তৈরি করে
দলীয় ভূমিকা ও ব্যক্তিগত ত্যাগ তুলে ধরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বলয়ভিত্তিক
রাজনীতি ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে।
অনেকেই বলছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড যদি দ্রুত প্রার্থী চূড়ান্ত না করে, তাহলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মন্তব্য: ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দল ও আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছি। বহুবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। দল নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবে।”
মেহেদী হাসান রনি জানান, “বাবা শহিদুল ইসলাম তিনবার এমপি ছিলেন। তাঁর ইমেজ এবং আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভালো ফলাফল আনতে চাই।
”মনির খান বলেন, “মহেশপুর-কোটচাঁদপুরে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষের সাড়া ভালো মিলছে।”
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই অধ্যাপক মতিয়ার রহমানকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকাভিত্তিক
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকার কারণে এখন সুসংগঠিতভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “ঝিনাইদহ-৩ আসনে জামায়াতের ঐতিহাসিক জনভিত্তি রয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে সাধারণ ভোটাররা আমাদের দিকেই ঝুঁকছেন।”
জামায়াত নারী ভোটারদের টার্গেট করে বিভিন্ন ঘরোয়া বৈঠক, সভা-সেমিনারে নারী নেত্রীদের সক্রিয়ভাবে
যুক্ত করছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যেআলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ আসনে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সাংগঠনিক তৎপরতা
চালালেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও প্রার্থী বা মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ চোখে পড়েনি।
এই আসনে বিএনপি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টানা তিনবার জয় লাভ করে। সাবেক সংসদ সদস্য
শহিদুল ইসলাম মাষ্টারই ওই তিনবার দলের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি তৃতীয়
অবস্থানে চলে যান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান চঞ্চল বিজয়ী হন, দ্বিতীয় হন জামায়াতের মতিয়ার রহমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই
ঐতিহ্যবাহী আসনটি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বলয়ভিত্তিক রাজনীতি ও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর
কারণে অনিশ্চয়তার মুখে। তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেও এই বিভাজন নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
বিএনপির একাধিক স্থানীয় নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি দল সঠিক সময়ে শক্ত, গ্রহণযোগ্য ও ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়, তবে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে।”