বিশেষ প্রতিনিধি:-
চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। এতে দিন দিন কমে আসছে আবাদি জমি। বিশেষ করে তিন ফসলি জমিতেও পুকুর খননের হিড়িক পড়ায় ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রদান দেশ। এ দেশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের পাশাপাশি ফলজ উৎপাদনে নির্ভরশীল।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি ও সবজি চাষ নির্ভর একটি জেলা। চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত খাদ্য ও সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্য ভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। দীর্ঘ বছর ধরে জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে সবজি, ভুট্টা, মালটা, পেয়ারা, ড্রাগন সহ বিভিন্ন ধরনের চাষ। তবে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে পুকুর খননে। ফলে পাল্লা দিয়ে চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি গ্রামেই আবাদি জমি, বসতবাড়ির পাশে পুকুর খনন চলছে। পাঙ্গাশ, মনোসেক্স, রুই, কাতলা ও সিলভারকার্প জাতীয় মাছ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেক কৃষক।
ফলে আবাদি জমিতে পুকুর খননের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে পুকুর খননের কাজ। বিশেষ করে এলাকায় যারা অনেক জমির মালিক কিংবা বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী তারাই পুকুর খননের কাজ করছেন। যত্রতত্র পুকুর খননের কারণে কোনো কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার জমি হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের চাষের জন্য উপযোগী। এ জমি নষ্ট করে এক শ্রেণীর মাটি খাদক চক্র চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এলাকার ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। এ কারণে এলাকার চাষ যোগ্য জমি হারাতে বসেছে।
সরজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আবাদি জমির অধিকাংশ এখন মাটি খাদকদের দখলে। এ মাটি খাদকেরা চাষের জমি খনন করে পুকুর করছে। এদের মধ্যে একজন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের তিতুদহ ইউনিয়ন ও বেগমপুর ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট নুরুল্লাপুর ব্রীজের নিকট নুরুল্লাপুর গ্রামের আব্দুল সামাদের ছেলে মঙ্গল মিয়া আবাদি জমির মাটি খনন করে পুকুর করছে। গ্রামের কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুকুর খননের চারপাশে আবাদি জমি রয়েছে। এ জমির পাশে একটি সরকারি খাল রয়েছে। এ কারণে চাষের জমির মধ্যে বর্ষা মৌসুমে আবাদি জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য ইতপূর্বে প্রতিবা করেও কোন প্রতিকার পায়নি। যে কারণে অনেক কৃষক তাদের আবাদি জমি পানির দরে লীজ দিয়েছে পুকুর মালিকদের নিকট। এরই মধ্যে ব্রীজের কোল ঘেঁষে আবাদি জমির মধ্যে করা হচ্ছে পুকুর খনন। এ যেন গোদের উপর বিশফোঁড়া। ফলে আবাদি জমিতে ইচ্ছেমতো পুকুর খননের কারণে সেই মাটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করায় সড়ক দিয়ে ট্রাক্টর যোগে মাটি বহন করা হচ্ছে। বহনকৃত মাটি ট্রাক্টর যোগে নেওয়ার সময় সড়কের উপরে ছিটকে পড়ে পিচের সড়ক মাটির কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। আর সামান্য বৃষ্টির পানি সড়কে পড়ে থাকা মাটি ভিজে তা কাঁদায় পরিণত হয়ে যানবাহনসহ কমলমতি শিশু শিক্ষার্থী সহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ও পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিশেষ করে তিতুদহের নুরুল্লাপুর গ্রাম হতে গ্রিসনগর বাজার সহ পার্শ্ববর্তী সড়ক গুলো পিচের বদলে কাঁদার সড়কে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে পানি বের হওয়ার পথ হারিয়ে গেছে। এ ইউনিয়নের আবাদি জমির প্রায় সবই দুই ফসলি ও তিন ফসলি। উর্বর ও সমতল এলাকা হওয়ায় সব ধরনের ফসল আবাদ হয়। এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে পুকুর খননের মচ্ছব চললেও যেন দেখার কেউ নেই। এমনটি অভিযোগ স্থানীয়দের। সদর উপজেলার নুরুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গ্রীসনগর বাজারের ব্যাবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, পুকুর খনন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। গ্রাম ও বাজারের অদূরে চাষের জমি কেটে গভীর গর্তের পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে আশপাশের জমি ও গাছপালা পুকুরে বিলীন হবে বলে আশংকা করছেন তারা। এ ব্যাপারে পুকুর খননের নামে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননে মাটি খাদকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছিনা। এ বিষয়ে পুকুর খননকারী জমির মালিক মঙ্গল মিয়ার কাছে পুকুর খনন ও সড়কে মাটি পড়ে কাঁদায় পরিণত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পুকুর খনন করছিলাম এখন আর করছিনা। তবে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। আর ট্রাক্টরে মাটি নেওয়ার সময় কিছু মাটি রাস্তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যায়। সেই মাটি বৃষ্টির পানিতে কাঁদায় পরিণত হয়েছে। যার কারণে রাস্তায় কাঁদা হয়েছে। তবে আমি পুকুর কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন শুধুমাত্র পুকুরের চারপাশ বাঁধা হলেই হয়ে যাবে।