জীবননগর-দত্তনগর সড়কের বেহাল দশা, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

জীবননগর অফিস:-

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক জীবননগর–দত্তনগর সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা ও কাদা-পানির স্তর, ফলে ভোগান্তির শেষ নেই এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি জীবননগর পৌর এলাকা থেকে শুরু হয়ে দত্তনগর ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ—শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক, রোগীসহ সাধারণ পথচারীরা উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। এছাড়া এটি জীবননগর ও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সংযোগ পথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে সড়কটির প্রায় ১ কিলোমিটার অংশের ইট উঠে গেছে, অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন চলাচল তো বটেই, পায়ে হাঁটাও এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যায়, ফলে ছোট যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. করিম হোসেন বলেন,এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। উপরন্তু মাছের আড়তের কারণে প্রতিদিন রাস্তায় মাছের পানি ফেলা হয়, এতে বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। ভালোভাবে পরিকল্পনা না করলে এই রাস্তা টেকসইভাবে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

একই এলাকার দোকানদার মজিবুর রহমান জানান,বৃষ্টি হলেই দোকানপাটে যাওয়া যায় না। ভ্যান, অটো রিকশা, মোটরসাইকেল আটকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে শুনছি রাস্তা হবে, কিন্তু কাজ শুরু হয় না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জীবননগর–দত্তনগর সড়কটি উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম পথ। শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা ও আশপাশের কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই ভাঙা রাস্তা ব্যবহার করছে। বিশেষ করে সকালে ও বিকালে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে প্রবল।

অন্যদিকে, এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত করেন। রাস্তায় খানাখন্দের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করতে গিয়ে দেখা দেয় চরম ভোগান্তি।

দত্তনগর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন,রাস্তা এমন খারাপ যে, বৃষ্টির পরে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে ভয় লাগে। অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও নতুন নয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময় সড়কটি সংস্কারের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তেমন কোনো কাজ হয়নি। তারা দ্রুত এ সড়কের টেকসই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম বলেন,জীবননগর–দত্তনগর সড়কটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কারের জন্য আমরা সড়ক বিভাগ চুয়াডাঙ্গা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি, বরাদ্দ পেলে শিগগিরই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাবনা বর্তমানে জেলা পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।

এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ বলছেন, শুধু মেরামত নয়—এই সড়কটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ঢালাই কংক্রিট (আরসিসি) সড়ক হিসেবে নির্মাণ করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে আর ভোগান্তি না হয়।

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জীবননগর–দত্তনগর  সড়কটি  আজ এলাকার  মানুষের জন্য এক ‘দুঃস্বপ্ন’। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও কাদা-পানির কারণে এ সড়ক এখন ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের একটাই দাবি—দ্রুত যেন সংস্কার কাজ শুরু হয় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথটি আবারও স্বস্তির রাস্তায় পরিণত হয়।###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *