মুক্তিযোদ্ধা মেলার লটারীর কুপন পুড়ানোর ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ স্বাধীনতা দিবসে ইউএনও’র কর্মসূচি বর্জনের ঘোষনা জীবননগরের মুক্তিযোদ্ধাদের

জীবননগর অফিস:

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় অসহায়-দুস্থ্ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনের নিমিত্তে গত মাসে জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক উপজেলার মনোহরপুর আমতলায় গ্রামীণ লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। ওই মেলার লাকি কুপনের লটারীর টিকিট বিক্রি করার সময় ভ্যান গাড়ী আটক করে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি সম্বলিত টিকিট ও ব্যানার পা দিয়ে দড়িয়ে-মুছিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার বাইরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কাজে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক স্বাধীনতা দিবসের সমস্ত কর্মসুচি বর্জনের ঘোষনা দিয়ে তারা পৃথক কর্মসুচি পালনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। অভিযুক্ত ইউএনও মো: রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,অনুষ্ঠান বর্জন যে কেউ করতে পারেন। তবে তা আনিত অভিযোগের সত্যতা ও যুক্তি সংগত হতে হবে।

জীবননগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সকল বীর মুক্তিযোদ্বাদের পক্ষে সাবেক কমান্ডার মো. দলিল উদ্দীন দলু স্বাক্ষরিত এক অভিযোগে জানা যায়,উপজেলায় বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৬৯ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের চাকুরিসহ নানা প্রয়োজনীয় বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রোকনুজ্জামানের নিকট গেলে তিনি তা নানা অজুহাতে গড়িমসি করে কালক্ষেপন করে থাকেন। বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথাও বলতে চান না,আবার কোন প্রশ্নের জবাবও দেন না। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন।

এদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত উপজেলার অসহায় ও দুস্থ্ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে একটি তহবিল গঠনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত গ্রামীণ লোকজন মেলার আয়োজন করা হয়। মেলাটি নিয়ম মাফিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি প্রদান করা হয় এবং মেলাটি নিয়মিত দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওপর থাকলেও তিনি তা না করে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত ব্যানার,লটারির টিকিট মাটিতে ফেলে তা পা দিয়ে দলিয়ে-মাড়িয়ে তা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্রও উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদেরকে অপমানিত বোধ করেন এবং চরম ভাবে বিক্ষুব্ধ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী এ ঘটনায় শুধুমাত্র জীবননগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা নয়,বরং সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমানিত করা হয়েছে। আর তারই প্রতিবাদে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সমস্ত কর্মসুচি বয়কটের ঘোষনা দিয়েছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা পাল্টা কর্মসুচিও ঘোষনা করেছেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দলিল উদ্দিন দলু বলেন,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রোকনুজ্জামান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের বর্তমান প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেলা চলাকালীন সময় তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি পালন না করে,মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমানিত করতে মেলার ব্যানার ও অন্যান্য কাগজপত্র পা দিয়ে দলিয়ে-মাড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রীতিমত অপমানিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ভুলত্রুটি থাকলে তিনি আমাদের অভিভাবক হিসাবে আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে পারতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে সব সময় উদাসিন ভাব দেখিয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মো. রোকুনুজ্জামান বলেন, তার দপ্তরে কোন মুক্তিযোদ্ধার কোন আবেদন বা কাগজপত্র পড়ে নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সকল কাজ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়। কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধারা নয়,আমার অফিসে কোন কাজই পড়ে নেই। আর হয়রানি করার তো প্রশ্নই আসে না। কোন মুক্তিযোদ্ধা হয়রানি হয়েছে বলে কেউ তো এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ করেনি। কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেনি এমন কোন নজির নেই। জীবননগর বাস স্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে মাইকিং করে লটারির নামে কুপন বিক্রি করা হচ্ছে এমন কথা জানতে পেয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করতে নিষেধ করি। কিন্তু এ নির্দেশ অমান্য করে লটারীর টিকিট বিক্রি অব্যাহত রাখে। টিকিটে বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কোন নাম ছিলো না। টিকিটে মোটর সাইকেল এবং গরু-ছাগলের ছবি দেখতে পেয়েছিলাম। আমি জেনে বুঝে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের হয়ারানি কিংবা টিকিট পদদলিত করেছি এ কথা সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অসত্য। তিনি আরো বলেন,কর্মসুচি যে কেউ বয়কট করতে পারেন। তবে বয়কটের আগে অবশ্যই যুক্তি সংগত কারণ থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *