জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করছেন। যে কোন সময় উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা এবং সদর উপজেলা থেকে ৩০-৪০ জন হিজড়া জীবননগর থানায় উপস্থিত হয়।
তাদের অভিযোগ জীবননগর উপজেলায় বসবাসকারি কয়েকজন হিজড়া তাদেরকে উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন এলাকায় কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে তারা আইনি সহযোগিতা চান। অন্যদিকে জীবননগরে বসবাসকারি হিজড়াদের দাবী অন্য উপজেলা থেকে আসা হিজড়ারা জীবননগর উপজেলার কোথাও তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। থানা কর্তৃপক্ষ বিশৃঙ্খলা এড়াতে উভয়পক্ষকে এক স্থানে না নিয়ে তাদের বক্তব্য পৃথক পৃথক ভাবে শোনার পর উভয়পক্ষকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর,আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলায় বসবাসকারি তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াদের সর্দার নয়নতারা(৬০) বলেন,আমার সাথে জীবননগর উপজেলায় যে সব হিজড়ারা কাজ করতেন তারা প্রায় সকলেই মারা গেছেন।
জীবননগর উপজেলায় বসবাসকারি অনেক জনপ্রতিনিধি,সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মরতদের জন্মকালিন সময়ে আমি তাদেরকে কোলে নিয়ে নাচিয়েছি। আর এখন হঠাৎ করে জীবননগর বসবাসকারি কয়েকজন হিজড়া উপজেলার শুধুমাত্র আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে আমাদের কাজে বাঁধা দিয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সরকার কোন এলাকা নির্ধারণ করে দেননি। তাহলে আমরা কেন চুয়াডাঙ্গায় বসবাসকারি হিসাবে জেলার একটি অংশ আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে আমাদের কার্যক্রম চালাতে পারব না? আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন লিখিত ভাবে আমরা আন্দুলবাড়ীয়ার কোন অংশে কাজ করতে পারব তার একটি নির্দেশা উল্লেখ করে দিয়েছেন এবং জীবননগরে বসবাসকারী হিজড়া সে সময় তা মেনেও নিয়েছেন।
কিন্তু এখন তারা আবার কেন আমাদেরকে বাঁধা দিচ্ছে? আমাদেরকে বলা হচ্ছে আমরা নাকি কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদহ এলাকা থেকে আন্দুলবাড়ীয়ায় যায়। তাদের এ অভিযোগ সত্য নয়,আমরা সকলেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উপজেলার ভোটার ও বাসিন্দা। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ভোটার,সুতরাং আমরা আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে অবশ্যই কাজ করার অধিকার রাখি এবং তা করব।
থানায় বুধবার সকালে জীবননগর থানায় এসেছিলাম। থানা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ইউএনও স্যারের মাধ্যমে নিস্পত্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা জীবননগর ইউএনও স্যারের নিকটও যাব।
এদিকে জীবননগরে বসবাসকারী হিজড়াদের অন্যতম রতনা খাতুন বলেন,আমরা জীবননগরে বসবাসকারীরা দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি।
এ অবস্থায় বহিরাগত হিজড়ারা উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আমরা তাদেরকে প্রতিহত করি এবং এলাকায় প্রবেশ করলেই তাদেরকে যে কোন মুল্যে প্রতিহত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখিত ভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন যে,বহিরাগত কোন হিজড়া জীবননগর উপজেলায় কোথাও তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। সেই হিসাবে আমরাও তাদেরকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেব না। তারা আসবে আমাদের সাথে সৌজন্যমুলক দেখাশুনা করে চলে যাবে। কোন সমস্যা হলে আমরা এক যোগে সমস্যা সমাধানে কাজ করব। সে ব্যাপারে কোন গ্রুপিং থাকবে না।
আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন বলেন,উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে একটি লিখিত ভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে বহিরাগত হিজড়ারা আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে তাদের কোন কার্যক্রম চালাতে পারবে না এবং কোন প্রকার ঝগড়া বিবাদে জড়াতে পারবে না।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন,চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা হিজড়াদের সাথে কথা বলা হয়েছে। তাদের অভিযোগ শোনার পর উভয়পক্ষকে শান্তিপুর্ণ ভাবে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। হিজড়ারা যাতে কোন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন,জীবননগর উপজেলায় বসবাসকারি হিজড়াদের নিয়ে বসা হয়েছিল।
তাদের বক্তব্য শুনে বহিরাগত হিজড়াদের ব্যাপারে আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাঝোতা করা যায় কি না,সেটা পরবর্তীদে দেখা যাবে।