জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনা আপসের নামে গোপনে রফাদফা করেছেন উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন।
ধর্ষণের জরিমানা আদায় করা ৪০ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা করে পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
সোমবার সন্ধ্যায় জীবননগর থানায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ধর্ষণের বিষয়ে একটি মামলা করেন।
ধর্ষণের ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার(৭ মার্চ) রাতে হলেও দুই দিন পর শনিবার (৯ মার্চ) সালিস বৈঠক করে ওই জরিমানা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর জানাজানি হয়।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কুলতলা গ্রামের হঠাৎ পাড়ার একজন হতদরিদ্র পরিবারের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রী (১৩) স্থানীয় বাজার থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন।
পথিমধ্যে একই ইউনিয়নের মিস্তিরি পাড়ার মৃত দরুদ আলীর ছেলে আনারুল (৩০) তাকে ফুসলিয়ে নবনির্মিত একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
ওই ভবনের মধ্য দিয়ে মেয়ে কান্নার শব্দে স্থানীয় কয়েকজন যুবক কৌতূহল বসত ওই ভবনের ভিতরে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণের অবস্থায় দেখতে পান। স্থানীয়দের দেখে আনারুল পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তারা।
বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার পরের দিন সকালে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা লিটন নিজে ভুক্তভোগী ওই মেয়েটির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে মেয়েটির কাছে সকল বিষয়টি শুনে পরিবারে সদস্যকে বলে যান মেয়েটিকে দূরে কোথাও রেখে আসতে বলেন।
এরপরে ওইদিন দুপুরের দিকে ইউনিয়ন পরিষদে ধর্ষক আনারুলকে ডেকে গোপন একটি সালিশ বৈঠক করা হয়। সেখানে ধর্ষককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা ভুক্তভোগী পরিবারকে দিলে তারা সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। অবশিষ্ট টাকা ওই ইউপি চেয়ারম্যানে পকেটস্থ করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক বলেন, মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আনারুল বড় ধরনের অন্যায় করেছে। শুধু এই মেয়েকেই নয় এর আগেও ৪-৫টি মেয়ের সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জেনেছি।
আমরা অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান লিটন টাকার লোভে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। তারা ধর্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বলেন, বিষয়টি এলাকায় চায়ের দোকানে শুনেছি,রাতে আনারুলকে চেয়ারম্যানের লোক তুলে নিয়ে গিয়েছিলে বলে জেনেছি, তবে এসব বিষয় গোপনে ব্যবসা হয়। আমি টাকা পয়সা খাই না সেজন্য আমাকে জানানো হয় না। কি ভাবে বিচার হয়েছে তা আমি জানি না, চায়ের দোকানে এসব কথা শোনা যাচ্ছে,তাই আমি শুনেছি।
ভুক্তভোগীর এক আত্মীয় জানান, এতবড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে মাত্র ১০হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য তারা বলে গিয়েছে। আমরা টাকা চাই না।টাকা ফেরত দিয়েছি। বিষয়টি সমাধানে জন্য আমাদের যেখানে যাওয়ার সেখানে যাবো।
ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বলেন, চেয়ারম্যান ঘটনার পরে আমাদের বাড়ি এসে মেয়েকে অন্য কোথাও রেখে আসার জন্য বলে গিয়েছিলো, সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা মেয়েকে দূরে রেখে এসেছি।
পরে শুনছি চেয়ারম্যান ৪০ হাজার টাকা খেয়েছে। তবে কত টাকা কারা কারা খেয়েছে আমরা সঠিক জানিনে।
তিনি আরও বলেন,এ বিষয়টি জন্য আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত আনারুলের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফনে একাধিকবার কল দিলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্ত্রী জানান, ঘটনাটি আমি সঠিক জানি না। লোকমুখে যতটুকু শোনা যাচ্ছে ততটুকুই শুনছি।
এবিষয়ে বিচারে কি সিন্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচারের পরেই তিনি এলাকার বাইরে চলে গিয়েছে। কত টাকায় সমাধান হয়েছে সব চেয়ারম্যান জানেন। তিনিই সব ডিল করছেন।
সালিশ বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনাটি মিমাংসা করা ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা হাকিবুর রহমান লিটন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি ওই মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম।
তারা বিষয়টি গোপন করার জন্য আমার কাছে অস্বীকার করেন। তাদের সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলেও তারা মেয়েকে বিয়ে দেয়া কথা ভেবে কোন ধরনের আইনের আওতায় আসতে রাজি নন।
ধর্ষণের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,টাকা পয়সার যে সব কথা উঠছে তা ভিত্তিহীন।আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিষদে কোন বিচার হয়নি। আমি আনারুলকে এমনি ডেকে ছিলাম,ঘটনাটি শোনার জন্য।
তবে ওই সময় আমার আর একটি বিচার থাকায় বিষয়টি শোনা হয়নি। তবে আজ উপজেলায় মাসিক সভা আমি বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম।বিষয়টি নিয়ে যাতে সঠিক বিচার হয়।
জীবননগর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, এবিষয়ে সন্ধ্যা মেয়ে বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। আমরা আসামিকে ধরতে কাজ শুরু করেছি।
এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে। তাছাড়া ওইদিন সার্কেল অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি শুনেছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনের আওতায় আসতে বলার জন্য বলেছেন।সেখানে বিচার সালিসের তো প্রশ্নই আসে না।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন,ধর্ষণের ঘটনার বিচার সালিসের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা লিটন মাসিক সভা উপস্থাপন করেছিলেন, তখন শুনেছি।