জীবননগর অফিস :-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার অন্যের সিল ও লাইসেন্স ব্যবহার করে বিবাহ পড়ানোর অপরাধে আলোচিত কথিত ও ভুয়া কাজি ফরহাদ হোসেন রাজুকে(৪২) অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। তিনি জীবননগর ডিগ্রী কলেজের অনার্স বিভাগে প্রভাষক হিসাবে কর্মরত। তিনি উপজেলাবাসির নিকট রাজু কাজি হিসাবে ব্যাপক ভাবে পরিচিত।
পলিশ তাকে বুধবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে শহরের মোল্লা সুপার মার্কেটের সামনে শাপলা ভবনের নিচতলা কাজি স্ট্যাম্প ভেন্ডার থেকে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
জীবননগর থানার চৌকস সাব-ইন্সপেক্টর ফিরোজ হোসেন বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ কর্তৃক বিশেষ মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কথিত ও ভয়া কাজি রাজুকে গ্রেফতার করেন। ফরহাদ হোসেন রাজু কাজি জীবননগর পৌর শহরের হাসপাতালপাড়ার মৃত আবুল কালাম আজাদ কাজির বড় ছেলে।
জানা যায়,ফরহাদ হোসেন রাজু জীবননগর শহরের মোল্লা সুপার মার্কেট সংলগ্ন শাপলা ভবনের নিচতলায় কাজি ভেন্ডার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অন্য কাজি(নিকাহ রেজিস্ট্রার) এর সিল ও লাইসেন্স ব্যবহার করে অহরহ বিবাহ ও তালাক সম্পন্ন করে আসছিলেন।
তার বিরুদ্ধে বার বার ভুয়া কাজি হিসাবে বিয়ে ও তালাকনামা সম্পন্ন করার অভিযোগ ওঠে। এ ধরনের একাধিক অভিযোগে তাকে উপজেলা ও থানা প্রশাসনে দৌড় ঝাপ করতে হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই তাকে রশি টেনে ধরা যায়নি।
ইতিপূর্বে ভুয়া কাজি হিসাবে বিয়ে পড়ানোর অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১৫ দিনে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কাজি সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাসেম সরকার বলেন,ফরহাদ হোসেন রাজু একাধারে জীবননগর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক, উকিল,স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও কাজি হিসাবে পরিচয় দিয়ে আসছিল। তিনি সরকারের লাইসেন্সধারি কোন কাজি না হলেও দীর্ঘদিন ধরে একেক সময় একেক কাজি সিল ও লাইসেন্স ব্যবহার করে বিবাহ-তালাকনামার কাজ সম্পন্ন করে আসছিলেন। বার বার ধরে ধরা খায়,কিন্তু প্রভাবশালীদের সুপারিশে রক্ষা পেয়ে যায়। একজন কাজির লাইসেন্স ও সিল ব্যবহার করে বিয়ে পড়ানোর অপরাধে তার বিরুদ্ধে আলম কাজি কোর্টে মামলাও করেছেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
আবুল হাসেম সরকার আরো বলেন,ভুয়া এই রাজু কাজি-ই আমাদের চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি,উপজেলা নির্বাহী অফিসার,উপজেলা সাব-রেজিস্টার ও মেয়রের সিল-সাক্ষর করে এবং মাদ্রাসার ভুয়া সনদে কাজি লাইসেন্স নেয়ার সময় ধরা খায়। কিন্তু সব ঘটনায় জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় রক্ষা পেয়ে যায়। সে এবারও একই ভাবে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।কিন্তু জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শক্ত অবস্থানে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেন।
তার মত ভুয়া কাজিদের কারণে সমাজে অহরহ বাল্য বিয়ে আর তালাকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তার বদনাম প্রকৃত কাজিদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। শুধু রাজু নয়,তারমত সকল ভুয়া কাজিদের গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করার দাবি জানাচ্ছি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জাবিদ হাসান বলেন,বুধবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজের নেতৃত্বে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে অন্যের সিল ও লাইসেন্স ব্যবহার বিয়ে সম্পন্নকারি ভুয়া
কাজি ফরহাদ হোসেন রাজুকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় জীবননগর থানায় ৪১৯ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। রাজু একাধিক মামলার আসামি। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।