জীবননগর কৃষ্ণপুর তিন ফসলি জমিতে সোলার প্লান্ট নির্মানের বিরুদ্ধে গ্রামবাসি কাফনের কাপড় পরে ও হাতে বিষের বোতাল নিয়ে বিক্ষোভ জীবন দেবো রক্ত দেবো জমি দেবো না

জীবননগর অফিস:-
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের  কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠের তিন ফসলী  জমিতে ৫০ মেঘাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গ্রামবাসিারা বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে ও হাতে বিষে বোতল নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
কৃষি জমিতে সোলার প্লান্ট নির্মানে বিরুদ্ধে গত ২০১৮ সাল থেকে কৃষ্ণপুর গ্রামবাসী নানা ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহল  কোন ভাবেই থেমে নেই তাদের কার্যক্রম থেকে।
এ বিষয়টি বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পরিদর্শন করতে আসেন ভুমি মন্ত্রনালয়ের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্তকারী টিম।
 তিন ফসলী মাঠের কৃষি জমিকে জীবননগর উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা   অকৃষি জমি হিসাবে প্রতিবেদন তৈরী করে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মানের জন্য উপযুক্ত তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করেন।
 আর সেই বছর থেকেই একটি প্রভাবশালী কৃষ্ণপুর মাঠের কৃষি জমিতে সোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে।
 বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই)সকালে  এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিমের জমি পরিদর্শন করাকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক-কৃষানিরা কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে, বিষের বোতল হাতে নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর এ প্রতিবাদ কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করেন।
এসময় মাঠের জমি পরিদর্শনকালে  গ্রামবাসী প্রতিবাদের সময় অনেকটাই উত্তেজিত ও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময়  দীর্ঘ সময় ধরে তারা বিষের বোতল হাতে নিয়ে ও কাফনের কাপড় পরে পরিবারপরিজনদের সাথে  নিয়ে মানববন্ধনও  করে। এসময় গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা  জানায় আমরা জীবন দেবো,গায়ের রক্ত সব ঢেলে দেবো তারপরও আমাদের ফসলের জমি দেবো না।
কৃষ্ণপুর গ্রামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের  তদন্ত টিম গ্রামে প্রবেশের পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
 উল্লেখ্য গত ২০১৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সাইকিলিক্ট এনার্জি লিমিটেড চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের ৬শ’ বিঘা তিন ফসলী জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে আসছে।
এবিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে  কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে  চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা কৃষ্ণপুর গ্রামের উল্ল্যেখিত জমি যে তিন ফসলী জমি এর স্বপক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ে  প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু তার পরেও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর এমপি উক্ত কোম্পানির পক্ষে গত ১৪ ই নভেম্বর ২০২৩ তারিখে  ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি ডিও লেটার দেন।
উক্ত ডিও লেটার পাওয়ার পর গত ১৬ মে ২০২৪ ভূমি মন্ত্রণালয়  যুগ্ম-সচিব মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম কে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।  উক্ত তদন্ত কমিটি সদস্যরা বৃহস্পতিবার কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠে সরজমিনে পরিদর্শন করতে যান।
বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠে প্রবেশ করলে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা তদন্ত কমিটির সদস্যদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং তাদের তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য আবেদন জানায় এবং গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বলে জমি অধিগ্রহণ হলে তারা জীবন দেবে তবু জমি দেবেনা। এসময় গ্রমবাসীদের  হাতে ছিল বিষের বোতল গায়ে ছিল কাফনের কাপড়। বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা তাহাজ্জুত হোসেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ মীর্জা তাহাজ্জুত চেয়ারম্যান পাওয়ার প্লান্ট নির্মানের ব্যাপারে কোম্পানিকে সহযোগীতা করছেন।
উল্লেখ্য এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শান্ত রাখতে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন  করা হয়।
এদিকে এনিয়ে গত   ২০২২ সালে উক্ত কোম্পানীর পক্ষে জনৈক আবু তাহের জবা বাদী হয়ে গ্রামের তিন শতাধিক কৃষকের  বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজী  মামলা দায়ের করেন। এ মামলায়  কৃষকরা আদালতের বারান্দায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্ণা দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *