মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
ভিনদেশে ভাগ্য বদলের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঝিনাইদহের মহেশপুরের এক যুবককে। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের আগে ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্নের শিকার হয়েছেন তিনি।
নরকের যন্ত্রণা: লিবিয়ার বন্দিশালা
অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করার সময় লিবিয়ার ভয়ংকর মানব পাচারকারীদের হাতে বন্দি হন ১০ জন বাংলাদেশি যুবক। তারা ভিন্ন ভিন্ন জেলার হলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একই শৃঙ্খলে আবদ্ধ হন। লিবিয়ার এক বন্দিশালায় টানা ৭-৮ মাস আটকে রাখা হয় তাদের, যেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে ধুঁকতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে একেকজনের মুক্তিপণের নামে আদায় করা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু মুক্তি মিললেও শরীরের রক্ত পানি করে শোধ করতে হয়েছে সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার মূল্য।
স্বপ্নভঙ্গের করুণ পরিণতি
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জামতলা পাড়ার মোঃ ইছানবীর ছেলে এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন। একসময় কলেজে পড়া স্বপ্নবাজ এই যুবক বিদেশ গিয়ে পরিবারের ভাগ্য বদলানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। বাবা ইছানবী জমি বিক্রি করে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করেন ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য। কিন্তু তার বদলে ছেলেকে পেয়েছেন প্রায় মৃত্যুপথযাত্রীঅবস্থায়।
তিনি বলেন,
“আমার ছেলের কত সুন্দর চেহারা ছিল! কত স্বপ্ন দেখতাম ওকে নিয়ে। কিন্তু আজ ওর শরীরে শুধুই হাড় আর চামড়া। এই কষ্ট সহ্য করার মতো না।”
মায়ের বুকফাটা কান্না
ছেলের এমন পরিণতি দেখে তার মা শোকে কাতর। তিনি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন,
“ছবির ডান পাশের ছেলেটা আমার সন্তান। ওর এমন অবস্থা হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আল্লাহ যেন আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না করেন।”
সতর্কবার্তা: দালালের খপ্পরে পা দেবেন না
এই মর্মান্তিক ঘটনা সবার জন্যই এক করুণ শিক্ষা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করতে গেলে যে কতটা ভয়ানক পরিণতি অপেক্ষা করতে পারে, তা এই যুবকের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ— দালালের মিথ্যা প্রলোভনে ভুলে গিয়ে সন্তানদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবেন না। বৈধ উপায়ে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করুন, নয়তো স্বপ্নের বদলে মৃত্যু অথবা আজীবন পঙ্গুত্বের শিকার হতে হতে পারে।