যশোরে সংঘর্ষের জেরে আব্দুলপুরে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

গঞ্জেরখবর ডেস্ক :-

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে বুধবার সকালে আব্দুলপুর গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পটভূমি:

মঙ্গলবার সকালে বড় হৈবতপুর মাঠে সেচের পানি নিয়ে বিরোধের জেরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে বিএনপির ৫ কর্মীসহ ৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হামলা ও অগ্নিসংযোগ:

বুধবার বেলা ১১টার দিকে বড় হৈবতপুর গ্রামের প্রায় দেড়শতাধিক মানুষ সশস্ত্র অবস্থায় আব্দুলপুর গ্রামে এসে সাজিয়ালী-আব্দুলপুর ওয়ার্ডের মেম্বর আনিসুর রহমান, সাবেক মেম্বর মহসীন আলী, তৌহিদুর রহমান, রমজান, লাল্টু, মিন্টু ও ইসরাফিলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রশাসনের পদক্ষেপ:

খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পরিস্থিতি শান্ত করে। সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নিয়ামুল জানান, “সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানে পুরো এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।”

বর্তমান পরিস্থিতি:

হামলার পর থেকে আব্দুলপুর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলাকারীদের ভয়ে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকা উচিত। আব্দুলপুর গ্রামে কয়েকজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সাথে জড়িতরা যে দলের হোক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। রাজনীতির নামে নোংরামি সহ্য করা হবে না।”

আইনি পদক্ষেপ:

এ ঘটনায় ইউপি সদস্য আনিসুরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে আসামিরা বাদীসহ বড় হৈবতপুর গ্রামের আরও ১০/১৫ জনের জমির পানির আইল কেটে তৌহিদের জমিতে পানি নেওয়া শুরু করে। বিষয়টি জানতে পেরে তিনিসহ ওই গ্রামের আরও ১০/১৫ জন চাষী এর প্রতিবাদ করেন। এর জের ধরে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়।

উচ্চপর্যায়ের পরিদর্শন:

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেন খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের নারী সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন এবং উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

উদ্ধার কার্যক্রম:

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম আব্দুলপুর গ্রাম থেকে লুট হওয়া ১১টি ছাগল ও ৮টি গরু উদ্ধার করে মালিকদের ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *