আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:-
একসময় ঝিনাইদহ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরে অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) অফিসটি ছিল কোলাহলমুখর ও ব্যস্ততম একটি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ এটি এক পরিত্যক্ত, কার্যত মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট, অনিয়মিত সেবা এবং আধুনিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ব্যর্থতায় এটি তার জৌলুস হারিয়েছে।
সেবা সংকট ও গ্রাহকদের ভোগান্তি
বিটিসিএল একসময় ঝিনাইদহ জেলায় হাজার হাজার টেলিফোন সংযোগ এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদান করত।
সরকারি টেলিফোন লাইন থাকা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।
কিন্তু বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের দাপটে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে না পারায় গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলায় মাত্র ১,২৭৪টি টেলিফোন সংযোগ চালু রয়েছে,
যার মধ্যে ৬০০টি জি-ফোন ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু এই সংযোগগুলোও নানা সমস্যায় জর্জরিত। ২৪ ঘণ্টা সেবা না থাকা, দক্ষ কারিগরি জনবলের অভাব, এবং সেবার ধীরগতি গ্রাহকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, টেলিফোন বিল নিয়মিত বাড়িতে পৌঁছে না, ফলে হঠাৎ করেই বড় অঙ্কের বিল পরিশোধের চাপ সৃষ্টি হয়।
জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা
ঝিনাইদহ বিটিসিএল অফিসে বর্তমানে মাত্র ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। উপজেলা পর্যায়ে অফিস পাহারায় কোনো কোনো স্থানে মাত্র একজন কর্মী রয়েছেন। এতে গ্রাহক সেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের তিনজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে ওই পদও বিলুপ্ত হবে। ফলে জনবল সংকট আরও প্রকট হবে।
বিটিসিএলের একজন গ্রাহক এসএম বিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ৮ বছর আগে টেলিফোন সংযোগ বন্ধ করলেও সম্প্রতি তাকে ৮ বছরের বিল একসঙ্গে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে! অথচ এতদিন কোনো বিল পাঠানো হয়নি।
অন্য এক গ্রাহক মিনারা পারভীন জানান, তার বাড়িতে নিয়মিত বিল পৌঁছায় না, ফলে হঠাৎ করে বড় অঙ্কের বিল পরিশোধ করতে হয়, যা কষ্টসাধ্য।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জি-ফোন গ্রাহক বলেন, তার বাড়িতে কোনো বিলই আসে না, অথচ পরিষেবা ব্যবহার করার পরও তিনি জানেন না কত টাকা বকেয়া রয়েছে।
বিটিসিএল কতৃপক্ষের ব্যাখ্যা
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ বিটিসিএল এর সহকারী ব্যবস্থাপক পল্লবী ঘোষ জানান, অফিসের জনবল সংকট সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা নেই, এটি যশোর থেকে জানতে হবে।
তবে জনবল বৃদ্ধি করা হলে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিটিসিএলের ভবিষ্যৎ কী?
প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে না পারলে ঝিনাইদহ বিটিসিএল অফিস পুরোপুরি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।
সেবার মান উন্নয়ন, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং গ্রাহকসেবায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না।
সরকারি উদ্যোগ ও আধুনিক পরিকল্পনার অভাবে এটি ক্রমেই একটি মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে।
উপসংহার
একসময়কার ব্যস্ত ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ বিটিসিএল আজ শুধুই স্মৃতির অংশ।
সময়ের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি তার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়।
যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এটি অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।