ঝিনাইদহে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড: ভ্যান ছিনতাইয়ের জন্য চালককে বিষপান করিয়ে হত্যা

আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহে ইব্রাহীম মন্ডল (৩৮) নামে এক ভ্যানচালককে পরিকল্পিতভাবে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ছিনতাইকারীরা ভ্যান ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করায়। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে দেওয়া ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে’ ইব্রাহীম মন্ডল এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত ইব্রাহীম সদর উপজেলার সাধুহাটী গ্রামের রুহুল আমিন মন্ডলের ছেলে।

মৃত্যুর আগে যা বলেছিলেন ইব্রাহীম মন্ডল

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ইব্রাহীম ভ্যান নিয়ে রাস্তায় যাত্রী পরিবহন করছিলেন।

এ সময় রতন নামে এক ব্যক্তি কোটচাঁদপুরের জালালপুর গ্রামে যাওয়ার কথা বলে তার ভ্যান ভাড়া করে।

রাস্তায় চলার সময় রতন প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করছিল। তারা যখন ডাকবাংলা ত্রিমোহনী এলাকায় পৌঁছায়, তখন ইব্রাহীমকে বাধা দিয়ে দাঁড় করানো হয়।

এরপর রতন, আবু সাইদ ও রফিকুল ইসলাম রফি মিলে জোরপূর্বক তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়।

ভ্যান বিক্রির নৃশংস চক্রান্ত

বিষপান করানোর পর ইব্রাহীমের ভ্যানটি মাত্র ১৮ হাজার টাকায় বাজারগোপালপুর এলাকায় বিক্রি করে প্রতারকরা। পরে তারা এই অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।

চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই, তারপর নিষ্প্রাণ দেহ

বিষপানের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ইব্রাহীম। পরিবারের সদস্যরা তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তিনি মারা যান।

‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে’ হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ

মৃত্যুর  আগে  ইব্রাহীম  মন্ডল  ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে’ তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেন।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা হলো—

রতন (সাধুহাটী গ্রামের লালু কাজীর ছেলে)
সামিরা (চুয়াডাঙ্গার হাসানহাটি গ্রামের বাসিন্দা)
ইমান ঘটক (সদর উপজেলার বাদপুকুর গ্রামের বাসিন্দা)
আবু সাইদ (আমেরচারা গ্রামের বাসিন্দা)
রফিকুল ইসলাম রফি
শরিফুল ইসলাম (কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের বাসিন্দা)

শোকাহত পরিবার ও বিচার দাবি

নিহতের ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন,
“আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। এছাড়া সংসারে আরও দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। কীভাবে সংসার চলবে, আমরা জানি না। আমরা এই নির্মম হত্যার বিচার চাই।”

পুলিশের বক্তব্য

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন) জানান,
“বিষয়টি আমাদের নজরে আছে।

নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপসংহার

ভ্যান ছিনতাইয়ের মতো একটি সামান্য ঘটনার জন্য একজন অসহায় শ্রমজীবী মানুষকে এভাবে হত্যা করা অত্যন্ত নির্মম ও হৃদয়বিদারক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুততম সময়ে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে—এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *