ঝিনাইদহ অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন-সালেহা খাতুন বিদ্যালয়ে অনিয়ম: ভুয়া নিয়োগে চাকরি করছেন দুইজন!

আবু সাইদ শওকত আলী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:-

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন-সালেহা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বহির্ভূতভাবে দুইজন কর্মরত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

একজন সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারী, যাদের যথাযথ নিয়োগপত্র নেই, তবুও তারা এমপিও সুবিধা ভোগ করছেন।

অথচ একজন বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি, এবং পূর্বের অফিস সহকারীকে প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভুয়া নিয়োগ ও জালিয়াতির অভিযোগ

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০২২ সালে সরকারিভাবে এমপিওভুক্ত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মোছাঃ হালিমা খাতুন নামে এক শিক্ষিকা সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে ২০২২ সালের ৭ জুলাই এমপিওভুক্ত হন।

তবে ব্যানবেইজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি সমাজবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন,

কিন্তু ২০২২ ও ২০২৩ সালে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তালিকায় আসেন।

অথচ ২০১৯ সালের আগে তার নাম ব্যানবেইজের কোনো তালিকায় ছিল না

তার স্থলে ওই পদে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম, যিনি প্রকৃতপক্ষে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হালিমা খাতুন ২০১৯ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন,

কিন্তু এনটিআরসিএর সনদ ছাড়া সে নিয়োগ বৈধ নয়। তাই তাকে ২০১৪ সালের একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে নিয়োগপ্রাপ্ত দেখানো হয়। তার দেওয়া দুইটি নিয়োগপত্রে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল তার একটিতে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক ও অপরটিতে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের তথ্য রয়েছে, যা একটি বড় ধরনের অনিয়ম।

অবশ্য, এ বিষয়ে হালিমা খাতুন বলেন, ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন এবং নিয়োগের জন্য আগের প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়েছেন।

তবে কিভাবে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন, তা তার জানা নেই। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে তিনি জানান, ২০১৪ সালের নিয়োগের সময়কার প্রধান শিক্ষকের নামও তিনি জানেন না

অফিস সহকারীর ভুয়া নিয়োগ

শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, রেবা খাতুন নামে একজন অফিস সহকারীও একইভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তার নিয়োগপত্রে ২০১৩ সালের নিয়োগ দেখানো হলেও,

জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর জাল, স্মারক নম্বর নেই, এবং রেজুলেশনও জাল

এছাড়া,  তার  নিয়োগ  বিজ্ঞপ্তির  জন্য যে পত্রিকার কাটিং দেখানো হয়েছে, সেটি ২০০৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া “আজকের কাগজ” পত্রিকার ২০১৩ সালের একটি বিজ্ঞাপন! যা স্পষ্টতই জালিয়াতির প্রমাণ বহন করে।

অফিস সহকারী হিসেবে সঠিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন সবেদা খাতুন। কিন্তু তাকে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই একটি নোটিশ দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন সভাপতি আজম মেম্বার জোরপূর্বক তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে হুমকি দেন এবং বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন

ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন ও বিচার দাবি

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন,“আমি এই প্রতিষ্ঠানের বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক।

কিন্তু আমার নাম বাদ দিয়ে কিভাবে ২০২০ সালে আসা হালিমা খাতুন এমপিওভুক্ত হলেন? আমার পরিশ্রমের কি কোনো মূল্য নেই?”

একইভাবে, অফিস সহকারী সবেদা খাতুন বলেন,
“আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলাম, কিন্তু আমার বদলে অন্য কেউ সুবিধা ভোগ করছে।

আমি এই প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

এমপিওভুক্তির এই জালিয়াতির ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগীরা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহের  অধ্যক্ষ  মোশাররফ  হোসেন- সালেহা খাতুন বিদ্যালয়ের এই নিয়োগ জালিয়াতি প্রমাণ করে, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এখনো বড় সমস্যা।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে, প্রকৃত শিক্ষকদের সাথে চরম অবিচার হবে,

এবং শিক্ষার সঠিক পরিবেশও ব্যাহত হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *