আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:-
জলবায়ুর বৈরিতা, আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টি ও প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির ৭ম জেলা
সম্মেলন। কৃষক ও মজুরদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত এই দিনব্যাপী সম্মেলন ছিল লাল পতাকার মিছিল,
উদ্বোধনী সমাবেশ,সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আলোচনা সভা ও কাউন্সিল অধিবেশনে সমৃদ্ধ।
৭ মে ২০২৫, বুধবার সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ শহরের সুকান্ত সড়কের ফ্যামিলি জোনে নির্মিত ‘বিপ্লবী বাঘা যতীন-কমরেড ইলা মিত্র’
মঞ্চে জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা হয়।
উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক সুজন বিপ্লব এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বায়েজিদ চাষা ও আরিফুল ইসলাম মিটুল।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও গ্রামের শ্রমজীবী মানুষদের জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।
ন্যায্য মজুরি, চিকিৎসা ও শিক্ষার অধিকার থেকে এখনও তারা বঞ্চিত।”
তিনি আরও বলেন, “ক্ষেতমজুরদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা স্কিম চালুর দাবি দীর্ঘদিনের।
১০০ দিনের কর্মসূচি বন্ধ করে ৪০ দিনের নামে যে কর্মসূচি চালু আছে, তা দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে।”
সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন বাঁওড় এলাকার জেলে প্রতিনিধি নির্মল হালদার।
তিনি বলেন, “বাঁওড় ও জলমহালের সমাজভিত্তিক মালিকানা নিশ্চিত করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।”
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঝিনাইদহ জেলা সংসদ।
সম্মেলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনের স্থানীয় ও আঞ্চলিক নেতারা।
সম্মেলনে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- পল্লী রেশনিং চালু ও ন্যায্য মূল্যের দোকান প্রতিষ্ঠা,
- ষাটোর্ধ্ব মজুরদের মাসিক ১০ হাজার টাকা পেনশন,
- ১০০ দিনের কর্মসূচি পুনরায় চালু ও দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ,
- বাঁওড়সহ জলমহালের ইজারা বাতিল করে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা নিশ্চিতকরণ,
- ক্ষেতমজুরদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও বিদেশে কর্মসংস্থান,
- স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন,
- ঝিনাইদহের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও স্মারক নির্মাণ।
কাউন্সিল অধিবেশনে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন ও আলোচনার পর নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
কাজী ফারুককে সভাপতি ও সুজন বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠিত হয়। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।