আবু সাইদ শওকত আলী,বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের পোতাহাটী গ্রামের গ্রামীণ সড়কগুলোর দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
খানাখন্দে ভরা কাঁচা ও আধাপাকা এই সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কৃষি পণ্য পরিবহন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, এবং জরুরি চিকিৎসাসেবায় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
পোতাহাটী গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের কোলঘেঁষা এই গ্রাম সংযুক্ত রয়েছে ডাকবাংলা বাজার ও সাধুহাটী বাসস্ট্যান্ডের সঙ্গে।
গ্রামে অবস্থিত আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ ও সাধুহাটী কৃষি বীজ উৎপাদন খামার এলাকাটিকে শিক্ষাবান্ধব ও কৃষিনির্ভর কেন্দ্র হিসেবে গড়ে
তুলেছে। এছাড়াও গ্রাম সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছে বৃহত্তম কৃষি বাজার ও চাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ত্রিমোহনী বাজার।
তবুও এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কোন কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই গ্রাম দিয়ে প্রতিদিন পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন ও উপজেলার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকলেও এখন পর্যন্ত
প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়ক সংস্কার হয়নি। ২০০৬ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ্ব মশিউর রহমান ২ কিমি সড়ক
পাকাকরণ করেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেসব রাস্তাও সংস্কার না হওয়ায় আজ তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, “ইউনিয়নের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত। আমি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন
করায় রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে সাবেক সংসদ সদস্য আমার ইউনিয়নে উন্নয়ন বরাদ্দ প্রদান করেননি।
তবে এখন এই গ্রামটির সড়ক উন্নয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।”
স্থানীয় কৃতিসন্তান ও জেলা জজ আদালতের এপিপি আলাউদ্দীন আজাদ বলেন, “বর্ষা মৌসুমে গ্রামটি কার্যত জলমগ্ন হয়ে পড়ে।যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়, প্রসূতি নারীরা চিকিৎসাসেবা থেকে
বঞ্চিত হন, এবং কৃষিপণ্য পরিবহনও ব্যাহত হয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদের বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা বৈষম্যের
শিকার। নতুন সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে এখন সময় এসেছে ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার।”
এই প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)
প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, “পোতাহাটী গ্রামের তিনটি সড়কের মধ্যে একটি
আগে এলজিইডির তালিকায় ছিল না, তবে ২০২৪ সালের গেজেটে সেটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরেকটি সড়ক যশোর অঞ্চলের গ্রামীণ
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) ‘ডিপিপি’-তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে। বাকি সড়কগুলোর উন্নয়ন নতুন প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।”
গ্রামীণ উন্নয়নের এই বৈষম্য দূর করে পোতাহাটী গ্রামের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার ও পাকাকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।