বিনোদন প্রতিবেদক:-
বাংলা গানের জগতে এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম মোঃ খুরশীদ আলম। ১ আগস্ট ছিল তাঁর জন্মদিন।
এই দিনে ১৯৪৬ সালে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তম নেপথ্য কণ্ঠশিল্পীদের একজন।
পুরান ঢাকার আলাউদ্দীন রোডে বেড়ে ওঠা খুরশীদ আলমের শৈশব কেটেছে গানের এক অনন্য প্রেমে।
পিতা এ এফ তসলিমদ্দিন আহমেদ ও মাতা
মেহেরুননেছার সন্তান খুরশীদ আলম ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান।
যদিও পরিবারে সংগীতচর্চার পরিবেশ তেমন ছিল না, তবুও তাঁর চাচা ডা. সাজেদুর রহমানের কাছ থেকেই সংগীতের হাতেখড়ি।
তিনি পড়াশোনা করেছেন আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল, নবাবপুর সরকারি হাই স্কুল, জগন্নাথ কলেজ
(বর্তমান সরকারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং কলেজ অফ মিউজিক-এ।
১৯৬৭ সালে কলেজ অফ মিউজিক থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন।
সেই বছরই তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন।
তবে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটে ১৯৬৯ সালে, বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘আগন্তক’ চলচ্চিত্রে।
সেখানে নায়করাজ রাজ্জাকের জন্য প্লেব্যাক করা তাঁর গাওয়া গান— “বন্দি পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে, ও পাহাড় ও নদী, বলে দাও নিরবধি”—বাংলা
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় স্থান দখল করে নেয়। এই গান দিয়েই রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান খুরশীদ আলম।
১৯৬১-৬২ সালে জাতীয় আধুনিক সংগীত প্রতিযোগিতায় এবং ১৯৬২-৬৩ সালে জাতীয়
রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরে বাংলাদেশ বেতারের অডিশনে
প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক সমর দাসের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি তাঁকে ছয় মাস সংগীতচর্চায় গাইড করেন।
এরপর আজাদ রহমানের সান্নিধ্যে আরও দুই বছর গান নিয়ে কাজ করেন।
১৯৬৭ সালে কবি সিরাজুল ইসলামের লেখা এবং আজাদ রহমানের সুরারোপিত গান “তোমার দুহাত
ধরে শপথ নিলাম, থাকব তোমারই আমি কথা দিলাম” পাকিস্তানজুড়ে আলোড়ন তোলে।
বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে খুরশীদ আলম ছিলেন অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের
মাধ্যমে তিনি বাংলা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
যদিও তাঁর অবদানের তুলনায় প্রাপ্তি ছিল কম, তবুও ২০১৮ সালে সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত করে।
বর্তমানে স্ত্রী রীনা আলম এবং দুই কন্যা মেহরিন ও মেহনাজ আলমকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস
করছেন। বয়সের ভার নিয়েও তিনি থেমে যাননি— এখনো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চলেছেন নিয়মিত।
আজ এই বিশেষ দিনে, সঙ্গীতাঙ্গনে তাঁর দীর্ঘ পথচলা
ও অসামান্য অবদানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে জন্মদিনে রইল অশেষ শুভেচ্ছা।